১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১২:৪৯
শিরোনাম:

রিকশা আমাদের ঐতিহ্য, কিছু সড়কে রিকশা থাকবে: মেয়র তাপস

ঐতিহ্য রক্ষা ও রাজস্বের কথা চিন্তা করে কিছু সড়কে রিকশা চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। চলতি অর্থবছর থেকে নতুন করে রিকশাসহ অযান্ত্রিক সব যানবাহনের নিবন্ধন বা লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে ডিএসসিসি এলাকায় মোটর, যন্ত্র, ইঞ্জিন বা ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। ডিএসসিসি বলছে, লাইসেন্স না থাকলেও অযান্ত্রিক অবৈধ এসব বাহন বন্ধ হচ্ছে না। তাই এগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার পাশাপাশি শৃঙ্খলার মধ্যে এনে পরিচালনা করা হবে। তবে কী পরিমাণ নিবন্ধন দেয়া হবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) রিকশা লাইসেন্স বাবদ ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব ধরেছে ডিএসসিসি। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, রিকশা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এই রিকশা ঢাকা শহরের একটা বড় বৈশিষ্ট্য। এখানে রিকশা থাকবে। আমরা এটাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের ৫০ হাজারের মতো রিকশার নিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু চলাচল করে আরও কয়েকগুণ বেশি। কতগুলো রিকশা চলবে এবং কোন কোন সড়কে চলবে সেটা আমরা নির্ধারণ করে দেবো। পাশাপাশি শহরের সড়কগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতে কিছু রাস্তা থাকবে দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য। কিছু থাকবে যেখানে রিকশা চলবে। কিছু সড়ক থাকবে যেখানে শুধু হেঁটে চলাচল করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, আমরা অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নগরীতে কী পরিমাণ নিবন্ধন দেয়া হবে সেটি কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। আর নিবন্ধন বা লাইসেন্স ফি কত হবে তাও পরে জানানো হবে।

অযান্ত্রিক বাহনকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে খসড়া তৈরি করেছে ডিএসসিসি। এতে বলা হয়েছে, ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় চলাচলরত অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিবন্ধনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এমতাবস্থায় নিবন্ধন গ্রহণে আগ্রহী রিকশা, ব্যক্তিগত রিকশা, ভ্যানগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, টালিগাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি তথা অযান্ত্রিক যানবাহন মালিকদের নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত নিয়মাবলি অনুসরণ করতে অনুরোধ করা হলো।

দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, রাজধানীতে লাইসেন্সধারী রিকশা ও রিকশাভ্যানের সংখ্যা মোট ৭৯ হাজার ৫৫৪টি। যদিও বাস্তবে এর সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। বলা হয়, ১৯৮৬ সাল থেকে গত ৩৪ বছরে এসব অযান্ত্রিক বাহনের (রিকশা ও ভ্যান) নতুন লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখে সিটি করপোরেশন। যদিও এ সময়ে প্রতিদিনই রাস্তায় নেমেছে নতুন নতুন বাহন। এ অবস্থায় ‘অবৈধ’ এসব বাহনের নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে বৈধ রিকশা ও ভ্যানের সংখ্যা সাড়ে ৭৯ হাজার। আর অবৈধ রিকশার সংখ্যা ১০ লাখ। এই অবৈধ রিকশার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ২৮টি সংগঠন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এসব সংগঠনের মধ্যে ঢাকা বিভাগ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন।

এছাড়াও মহানগর রিকশা মালিক লীগ, রিকশা ও ভ্যান মালিক-শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ ও বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগ, রিকশা এবং শ্রমিক-মালিক লীগ, ঢাকা সিটি মুক্তিযোদ্ধা রিকশা-ভ্যান মালিক কল্যাণ সোসাইটি অন্যতম। লাইসেন্সবিহীন এসব রিকশা নিয়ন্ত্রণহীন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স দেয়া রিকশাগুলোর বিষয়েও এতদিন ছিল না কোনও নিয়ন্ত্রণ বা বিধিমালা। সম্পাদনা : খালিদ আহমেদ