১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:০০
শিরোনাম:

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর কে হচ্ছেন হেফাজতে ইসলাম আমির

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলামের আমির পদে দুই বাবুনগরীর নাম আসছে ঘুরেফিরে। তারা হলেন- হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। সূত্র : কালের কন্ঠ, মানবকন্ঠ

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশপরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আহমদ শফীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে নিজেকে সংগঠন থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায়ও আর আসেননি। কিন্তু গত শনিবার রাতে তিনি মজলিসে শূরার বৈঠকে উপস্থিত হন। দুই বাবুনগরীর পাশাপাশি আমির হিসেবে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নামও আলোচনায় রয়েছে।

মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতে ইসলামে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের আগে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জুনায়েদ বাবুনগরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। শাপলা চত্বরের জমায়েতপরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সমঝোতারও বিরোধিতা করেন তিনি। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে শুকরানা মাহফিলের প্রতিবাদে মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছিলেন মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তবে লিখিত না হওয়ায় ওই পদত্যাগের ঘোষণা কার্যকর হয়নি। এ অবস্থায় দুই বাবুনগরীর অনুসারীরা মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকেই হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দেখতে চান। ইতোমধ্যে তারা এমন দাবিও তুলেছেন।

মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর মাদ্রাসার মহাপরিচালক। আর গত শনিবার রাতে মজলিসে শূরার জরুরি বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান শাইখুল হাদিস ও শিক্ষাসচিব হন। ফলে অলিখিতভাবে তিনিই হাটহাজারীর ‘বড় মাদ্রাসা’ হিসেবে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলামের মূল কর্তৃত্বে চলে এলেন।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী আমাদের নতুন বার্ত া  কে বলেন, ‘আমি হেফাজতের মহাসচিব হিসেবে আছি। নতুন আমির কিংবা পরবর্তী যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কাউন্সিল ডাকা হবে। কাউন্সিলে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই হেফাজতের কার্যক্রম চলবে।’

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ছাত্ররা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছে, ভাঙচুর করেনি। এ আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। আন্দোলন সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

পুত্র আনাস মাদানীর সমালোচিত বিভিন্ন কার্যক্রমে জীবনের শেষ সময়ে বাবুনগরীর অনুসারীদের চাপে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। কিন্তু গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মৃত্যুর পর এখন শফীর পক্ষেই জনমত গড়ে উঠতে শুরু করেছে। অনেকে বলতে শুরু করেছেন, বাবুনগরীর অনুসারীরা মাদ্রাসায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে। তারা শফীর অক্সিজেনের লাইন খুলে নিয়েছে। এতে তার মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছে। বাবুনগরী এ দায় এড়াতে পারেন না। এসব আলোচনার কারণে বাবুনগরীকেও হেফাজতের মূল পদে দেখতে চায় না সংগঠনটির একাংশ।

টানা ৭০ বছর শিক্ষকতার পাশাপাশি হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় ৩৫ বছর মুহতামিম বা মহাপরিচালক ছিলেন শাহ আহমদ শফী। মৃত্যুর আগের দিন এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার কর্তৃত্বের পুরোপুরি অবসান হয়। তবে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এখনো শফীর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে আছে। জীবদ্দশায় শাহ আহমদ শফী বেফাকের চেয়ারম্যান ছিলেন। মহাসচিব ছিলেন ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। পরে আহমদ শফী তাকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব দেন। শফীর অনুপস্থিতিতে এখন তিনিই কার্যত বেফাকের চেয়ারম্যান। দুই বাবুনগরীর কেউ বেফাকের সঙ্গে যুক্ত নন।

দেশের কওমি মাদ্রাসার অনেকেই ইসলামী ঐক্যজোট, নেজামী ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তবে হেফাজতে ইসলামের আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত এমন নেতাদের হেফাজতের আমির ও মহাসচিব হওয়ার রেওয়াজ নেই।

এদিকে হাটহাজারীর বাইরেও উঠেছে হেফাজতে ইসলামের নতুন আমির পদের দাবি। ঢাকার চারিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকেও হেফাজতে ইসলামের আমির করার দাবি তুলেছে হেফাজতের একটি অংশ। গত শুক্রবার পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর শাহ আহমদ শফীকে চারিয়া মাদ্রাসায় নিয়ে গোসল দেওয়া হয়। সেখানে কাফনের কাপড় পরানো হয়।