৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৯:৩৭
শিরোনাম:

দায়িত্বে বসে সবকিছু তো আর বলা যায় না : এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ

সোমবার (২৮ সেপ্টম্বর) সকালে অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে এখন পর্যন্ত কলেজ বন্ধ আছে। যদিও ছাত্রাবাস বন্ধ, কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী টিউশনি করত, মানবিক কারণে তাই ছাত্রাবাসে ২৫ জনকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল।

ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে সালেহ আহমদ বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত যে ঘটনা ছাত্রাবাস চত্বরের ভেতরে ঘটেছে, এটাতো আকস্মিক ঘটেছে। কিন্তু পুরো বিষয়টিতে আমরা লজ্জিত। শুধু একজন অধ্যক্ষ হিসেবে নয়, একজন বাবা হিসেবে আমি বলতে চাই, এই তরুণীর পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। এই ভিকটিমের পরিবারের এখন সাপোর্ট দরকার।

তিনি বলেন, এখন এ ঘটনার পর সবাইকে ছাত্রাবাস ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। অলরেডি সবাই চলেও গেছে। কলেজ বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন আমি ক্যাম্পাসে এসেছি, অফিস করেছি। আমি অন্যান্য সহকর্মীদের বলেছি, আপনার অনলাইনে ক্লাস নিন, তবে মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসে আসেন, খোঁজখবর নেন। এখন বলেন- এত বড় একটি ক্যাম্পাস, এই করোনা পরিস্থিতিতে একা আমার পক্ষে দেখভাল করা সম্ভব? আমি একা কত করব? উপাধ্যক্ষ একা কত করবেন?।

তিনি আরও বলেন, দ্রæততার সঙ্গে দোষীদের গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনর। এদের এখন আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এরপর বিচার করতে হবে, বিচারে আস্থা আনতে হবে। বিচারহীনতার যে বিষয়টা, এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীর প্রতি যে সহিংসতা, এটা তো সর্বত্র চলছে। আমার প্রতিষ্ঠানেও এমনটা ঘটল। এখন, এরা (গণধর্ষণকারীরা) যদি ছাত্রাবাসে না গিয়ে অন্য জায়গায় যেত, তাহলেও তো ঘটনার ভয়াবহতা একই রকমেরই থাকত। এখন, আমার ছাত্রাবাসের গেটটা খোলা পেয়েছে, গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েছে। ছাত্রাবাসের ভেতরের রাস্তায় অন্ধকার ছিল, সেই সুযোগটা ওরা নিয়েছে। এপর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যরাও ধরা পড়বে আশা করি। প্রত্যেক দোষী গ্রেপ্তার হোক, এটা আমি চাই।

কলেজে ও ছাত্রাবাসে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ছাত্রলীগের নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রসঙ্গে সালেহ আহমদ বলেন, আমি তো সব কথা বলতে পারি না। আমার মুখে তালা লাগিয়ে থাকতে হয়। অনেক কিছু আছে আমরা বলতে পারি না। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বলতে পারি না। ২০১২ সালে ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়ার পর ৬ কোটি টাকা খরচ করে নতুন ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পোড়ানোর ঘটনার বিচার তো হয়নি। সেদিন ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। কারা ছাত্রাবাস পুড়িয়েছিল, সেটা প্রমাণের বিষয়, এ নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। তবে যারাই ছাত্রাবাস জ্বালিয়েছে, তাদের বিচার তো হওয়া প্রয়োজন। প্রকৃত দোষীদের বিচার হোক। তখন অন্যরা বুঝতে পারবে, দোষ করলে বিচার হবে। তবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে এখন এ-সংক্রান্ত কেসটা আছে।

ধর্ষণের ঘটনার পর দুজন নিরাপত্তাকর্মীকে বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নিয়েও ফেসবুকে সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওরা নিরীহ মানুষ, ওদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। তাহলে কেন তাদের বরখাস্ত করা হলো। দেখুন, মানবিকতা দেখালেও সমস্যা, না দেখালেও সমস্যা। আসলে তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা পেয়েছি বলেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন, গত শুক্রবার যে ঘটনা ঘটল, সেটা তো তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে ছাত্রাবাসের দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের জানানোর কথা ছিল। কিন্তু তারা তা জানায়নি। জানতে পেরেছি, ওরা নাকি তখন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।

অধ্যক্ষ বলেন, তরুণীর স্বামী থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানে ছয়জনের নাম উল্লেখ আছে। এর মধ্যে একজনের ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ ছিল। যেহেতু তার নামে অভিযোগ এসেছে, তাই সাময়িকভাবে তার সিট বাতিল করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার সিট চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হবে এবং তার ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হবে। মামলার তিনজন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। বাকি দুজন বহিরাগত। সার্বিক বিষয়ে তদন্ত চলছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে গত শনিবার। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বেপোরায়া আচরণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে সবাই ছাত্র, এটাই তাদের একমাত্র পরিচয়। একজন দোষী ও অপরাধী ব্যক্তিকে তার অপকর্মের দায় নিজেকেই নিতে হবে। যখনই ক্যাম্পাসে ছিনতাই কিংবা অন্য কোনো অপকর্মের অভিযোগ পেয়েছি, তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি, নিচ্ছি। আবার এটাও ঠিক, অনেকে সন্ধ্যার পর নীরব হয়ে যাওয়া কলেজে অবস্থান করেন। সেখানেও দর্শনার্থীদের সচেতন হতে হবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন যে কেউ, কিন্তু সন্ধ্যার পর এখানে থাকা ঠিক নয়। যারা বেড়াতে আসেন, তাদের অনেককেই দেখি ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে কলেজের পার্শ্ববর্তী টিলাতেও যান। এটাও তো ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিষয়েও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কলেজ এলাকায় পুলিশি টহল আরও বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাব।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে রাতে। দিনেরবেলা ঘটেনি। এসময় আমি বাসাতে থাকি। তখন তো আর অফিসে থাকি না। তবে বাসায় থাকলেও ২৪ ঘণ্টাই আমি দায়িত্ব পালনের মধ্যেই থাকি। হোস্টেল সুপার কিংবা কর্মচারীরা আমাকে কোনো বিষয়ে জানালে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যাই। কিন্তু আমাকে যদি নিরাপত্তাকর্মীরা না জানায় তাহলে খবর পাব কীভাবে? আসলে ওইসময় নিরাপত্তাকর্মীরা ওখানে ছিলেন না। বিষয়টি আমাকে পুলিশ জানিয়েছে। এরপর আমি তাদের দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই। বিষয়টি র‌্যাবকেও অবহিত করি। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার জন্য দুই নিরাপত্তা প্রহরীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে ঘুরতে আসা এক দম্পতিকে আটক করে জোর করে ছাত্রাবাসে তুলে আনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর স্বামীকে বেঁধে মারধর করে ওই তরুণীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে সাইফুরসহ অন্যরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী ওইদিন (শুক্রবার) রাতে বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে ৬ জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলো- এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।