১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:০৬
শিরোনাম:

অপহরণের ৬ বছর পর খুন হওয়া’ যুবক জীবিত ফিরলেন

ফতুল্লা থানায় একটি অপহরণ মামলার ছয় বছর পর নিজেই আদালতে হাজির হয়েছেন কথিত অপহৃত মামুন নামের এক যুবক। অথচ পুলিশ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ওই অপহৃতকে হত্যার পর লাশ গুম করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়েছে।

এ অবস্থায় বুধবার বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় কথিত অপহৃত হাজির হলে দেখা দেয় চাঞ্চল্য। ওই সময়ে বিবাদীপক্ষের লোকজন ক্ষেপে গিয়ে বাদীপক্ষের উপর হামলা করেছেন। আর এতে কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

আর সিআইডি তাদের দেয়া চার্জশীটে বলেছেন, ওই যুবককে অপহরণ করা হয়েছে। এসব কারণে গত ৪ বছর ধরেই মামলার আসামি হয়ে বিভিন্ন সময়ে কারাভোগ ও রিমান্ডের শিকার হয়েছেন খালাতো বোনসহ ছয়জন। মামলাটির বিচারকাজও সম্পন্নের পথে ।

এদিকে স্কুল ছাত্রী জিসা মনি কাণ্ডের রেশ না কাটতেই মামুন কাণ্ড প্রকাশ পাওয়ায় আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। জিসা মনিকে নিয়েও পুলিশ একই গল্প সাজিয়েছিল।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১০ মে মামুন অপহরণ হয়েছে অভিযোগ এনে দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ছয়জনকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল। মামলাটি প্রথমে পুলিশ ও পরে সিআইডি তদন্ত করে।

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ মামলার বিষয়ে সঠিকভাবে তদন্ত না করে আসামিদেরকে গ্রেফতার করে অমানুষিকভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করে জোর করে জবানবন্দী নেয়ার চেষ্টা করেছে। সেই সাথে কোনোরকম তদন্ত রিপোর্ট দিয়েই আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করার প্রক্রিয়াধীন ছিল। এরই মধ্যে ভিকটিম আদালতে হাজির হয়ে যান। একই সাথে মামলার নতুন মোড় নেয়।

অপহরণ মামলায় পুলিশ ও সিআইডির ভুল প্রতিবেদনে কারাভোগ করতে হয়েছে একই পরিবারের ছয়জনকে। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করতে হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলাটির বিচারকাজও শুরু হয়। কিন্তু এরই মধ্যে আদালতে হাজির হন কথিত অপহৃত সেই যুবক।

এসব কারণে গত চার বছর ধরেই মামলার আসামি হয়ে বিভিন্ন সময়ে কারাভোগ ও রিমান্ডের শিকার হয়েছেন খালাতো বোনসহ ছয়জন।

অথচ পুলিশ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ওই অপহৃতকে হত্যার পর লাশ গুম করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়েছে। আর সিআইডি তাদের দেয়া চার্জশিটে বলেছেন, যুবকটিকে অপহরণ করা হয়েছে।

মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে পুলিশ। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান। তিনি আদালতে আসামিদের রিমান্ড চাওয়ার সময়ে আর্জিতে উল্লেখ করেন, ‘খালাতো বোন তাসলিমা ২০১৪ সালের ১০ মে মামুনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করেছে।’

পরে মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, বিয়েতে রাজি না হওয়াতে বিবাদী ছয়জন মিলে মামুনকে কোমল পানিয়ের সাথে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে অপহরণ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তবে কোথায় কিভাবে কি অবস্থায় রাখা হয়েছে সেটা জানা যায়নি। সূত্র: মানব জমিন, নয়া দিগন্ত