২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:৪১
শিরোনাম:

শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রদানে সতর্ক হোন

অ্যামোক্সিসিলিন, একটি খুবই পরিচিতি প্রথম জেনারেশন অ্যান্টিবায়োটিক, বর্তমানে একেবারেই প্রেস্ক্রাইব করা হয় না। কারণ পরিত্যেক্তের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে। একসময় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়, পেনিসিলিনও অত্যন্ত কার্যকর ওষুধ ছিল। পেনিসিলিন যখন অকার্যকর হয়ে গেল, তখন বাজারে আসে টেট্রাসাইক্লিন। টেট্রাসাইক্লিন অকার্যকর হতেও বেশি সময় লাগেনি। তারপর আসে ক্লোরােকুইনােলন গ্রুপের সিপ্রােফ্লক্সাসিন, নালিডিক্সিক অ্যাসিড, ল্যাভােফ্লক্সাসিন জাতীয় অ্যান্টিবায়ােটিক, সেটাও এখন অকার্যকর।বর্তমানে কিছু কিছু জীবাণুকে ধ্বংস করতে প্রয়ােগ করা হচ্ছে সেফট্রিয়াক্সন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন কম্বিনেশন অ্যান্টিবায়ােটিক দিয়ে। তাও কত দিন কার্যকর থাকবে বলা মুশকিল।

যে হারে অ্যান্টিবায়ােটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটছে, সে হারে প্রতিনিয়ত উন্নত মানের অ্যান্টিবায়ােটিক উদ্ভাবন হচ্ছে না। বাজারে থাকা সবচেয়ে ক্ষমতা সম্পন্ন অ্যান্টিবায়ােটিক মেরােপেনেম পেটেন্টড হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। একটি ড্রাগ পেটেন্টেড হয়ে বাজারে আসতেও অনেক সময় নেয়। এরপর থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অ্যান্টিবায়ােটিক আবিষ্কারে বন্ধ্যা সময় পার হচ্ছে, কিন্তু অপব্যবহারের সুযােগ নিয়ে কিছু ব্যাকটেরিয়া ইতােমধ্যে মেরােপেনেম প্রতিরােধী ক্ষমতাও অর্জন করে ফেলেছে। বাজারে এখন অ্যামোক্সিসিলিন, ক্ল্যাভুলিনিক এসিডের এবং সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্ল্যাভুলিনিক এসিডের কম্বিনেশন পর্যন্ত চলে এসেছে এবং চিকিৎসকেরাও এই মেডিসিন গুলো অহরহ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
এই উচ্চ জেনারেশনের ওষুধগুলোও রেসিস্টেন্ট হয়ে পড়লে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতাে আর কোনাে অস্ত্রই চিকিৎসকদের হাতে নেই। এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করেই উন্নত বিশ্বে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যেকোনাে ধরনের অ্যান্টিবায়ােটিক বিক্রি করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলােতে চিকিৎসক স্বল্পতা এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আইন মেনে চলার বিষয়ে অনিহাসহ নানাবিধ কারণেই এই নিয়ম কার্যকর করা যাচ্ছে না। তাই অ্যান্টিবায়ােটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাব এ অঞ্চলেই বেশি। আর বাংলাদেশের মতাে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের ক্ষেত্রে এই ভয়ের মাত্রাটা যে কোন পর্যায়ের তা ধারণা করাও সম্ভব না। কারণ এদেশে কে কোন কোন অ্যান্টিবায়ােটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া বহন করছে তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরিও নেই।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  বাংলাদেশে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা আইসিইউ-তে থাকা রােগীদের একটি বড় অংশের মৃত্যুর পেছনে এন্টিবায়ােটিক প্রতিরােধী ব্যাকটেরিয়া দায়ী, যাদেরকে এই ক্ষমতার জন্য ‘সুপারবাগ’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এক দশক আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি ব্যাকটেরিয়া ওষুধ প্রতিরােধী হয়ে উঠছে। দ্য টেলিগ্রাফের ‘সুপারবাগস লিঙ্কড টু এইট আউট অব টেন ডেথস ইন বাংলাদেশ আইসিইউ’স” শিরােনামের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ মৃত্যুর অ্যান্টিবায়ােটিক প্রতিরােধী সুপারবাগ দায়ী। বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ংকর বাস্তবতাকেই নির্দেশ করে। যার মূলে রয়েছে, অ্যান্টিবায়ােটিক রেজিস্ট্যান্সি।

একবার ভেবে দেখুন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কি আমরা জীবন ঠিকমতো শুরুর আগেই তাদেরকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি না তো? তাই যেকোনো স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনে, রেজিস্টার্ড ডাক্তার এর প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী সঠিকরূপে মেডিসিন এর ডোজ নিন। মেডিসিন সংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শ প্রয়োজন হলে গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের জিজ্ঞাসা করুন। চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ, শিশুর শরীরে প্রয়োজন ব্যতীত উচ্চ প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিক প্রদানে বিরত থাকুন।অ্যান্টিবায়োটিক প্রদানের পূর্বে রোগীর বয়স, ওজন, পূর্ববর্তী হিস্ট্রি জেনে প্রেস্ক্রাইব করুন। একটু সুস্থ, সতেজ স্বদেশ গড়ে তুলতে আসুন আমরা সবাই এগিয়ে আসি।
পাভেল রহমান তন্ময়
ফার্মেসি বিভাগ(৫ম বর্ষ)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।