১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৭:০১
শিরোনাম:

কমিশন নৌ মন্ত্রণালয়ের বেতনভোগী, তাই তার বিরুদ্ধে এমন প্রতিবেদন : আসলামুল হক

যৌথ কমিশনের মাধ্যমে নদীর সীমানা নির্ধারণের আবেদন করে সেই কমিশনের প্রতিবেদনই প্রত্যাখ্যান করলেন সরকার দলীয় এমপি ও মায়িশা গ্রুপের চেয়ারম্যান আসলামুল হক। তিনি বলছেন, কমিশন নৌ মন্ত্রণালয়ের বেতনভোগী, তাই তার বিরুদ্ধে এমন প্রতিবেদন।

চলতি বছর মার্চে নদীর জমি দখল করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করায় এমপি আসলামুল হকের মালিকানাধীন মায়িশা গ্রুপের বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদে নামে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু সেসব অভিযানে বাধা প্রদানসহ বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তার দিকে তেড়েও যান এ সংসদ সদস্য। নদীর জমি দখল করে তার কোনো স্থাপনা নেই দাবি করে ওই সময় তিনি যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে নদীর সীমানা নির্ধারণেরও আবেদন করেন সরকারের কাছে।

আর কমিশন গঠন করে জরিপের আবেদনকারী এ সংসদ সদস্যই এখন বলছেন যৌথ নদী কমিশনের আইনী এখতিয়ার নেই নদীর সীমানা নির্ধারণে জরিপ চালানোর।

তারই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সরকারের ৮টি সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে নদীর ৫৪ একর জমি মায়িশা গ্রুপের দখলে উল্লেখ করে তা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এরই প্রতিবাদে শনিবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মায়িশা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকেন সংসদ সদস্য আসলামুল হক। আসলামুল হক বলেন, নৌ মন্ত্রণালয়ের কাছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বেতন ভাতা পান। তাই তাদের স্বার্থ রক্ষা করে কমিশন।

গত ২৬ নভেম্বর আসলামুল হকের মালিকানাধীন বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের তীরে মায়িশা পাওয়ার প্ল্যান্ট ও আরিসা ইকোনোমিক জোনের পুরো ৫৪ একর জমি নদীর জায়গা বলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সরকারের সংশ্লিষ্ট ৮টি সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে যৌথ জরিপ করে প্রতিবেদন দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে বারবার তিনি বলেন, আমি নদীর জায়গা দখল করিনি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন অযৌক্তিক, হীন উদ্দেশ্যে মনগড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সিএস আইন ১৮৭৫, এসএটিএ আইন ১৯৫০, আরএস আইন ১৯৭০ অপব্যাখ্যা করে জেলা প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এক সময়ে স্পারশোর চেয়ারম্যান ছিলেন বর্তমান কমিশন চেয়ারম্যান। তাই তার তার আজ্ঞাবহ অফিসার দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

আসলামুল হক বলেন, নৌ মন্ত্রণালয়ের আয়ে কমিশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয় বলেই সংস্থাটি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছে। এ সময় এমপি আসলামুল নদী কমিশন ও বিআইডব্লিউটিকে সরাসরি তার প্রতিপক্ষ বলে আখ্যায়িত করেন। নদীর সীমানা নিয়ে নদী কমিশনের জরিপ করে প্রতিবেদনে দেওয়ার কোনো আইনী ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন তিনি।

কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তা আইনী প্রক্রিয়ায় প্রতিকার চাইবেন বলে জানান সংসদ সদস্য আসলাম। খুব শিগগির বিশাল আইনজীবী প্যানেল নিয়ে আদালতের কাছে প্রতিকার চাইবেন বলেও উল্লেখ করেন সরকার দলীয় এ সংসদ সদস্য। এ সময় নদী কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যানকে নিয়ে নানা ধরনের বিষোদগার করেন।

যদিও এ বছরের ৩ মার্চ তার মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ইকোনোমিক জোনের অবৈধ অংশে উচ্ছেদ চালানোর পর আসলাম নিজেই নদী কমিশনে অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে নিয়ে যৌথ জরিপ করে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নদী কমিশন যৌথ জরিপ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ দখল করে গড়ে ওঠা মায়িশা পাওয়ার প্ল্যান্ট ও আরিসা ইকোনমিক জোনের নামে দখল করা হয়েছে ৫৪ একর বা ১৬২ বিঘা নদীর জমি। বন্ধ হয়ে গেছে স্রোতস্বীনি নদীর উৎসমুখ। সেই নদীর জায়গা দখলমুক্ত করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে বিআইডব্লিউটিএ। চলতি বছরের ৩ মার্চ বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্ট উচ্ছেদ অভিযানে গেলে সরকারি সংস্থা বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের তেড়ে আসেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য আসলামুল হক। এক ইঞ্চি জমিও দখল করা নয় দাবি করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে একইভাবে পরদিনও অভিযানে বাধা দেন তিনি।

জরিপে বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, সাভার ও কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের (ভূমি) সহকারী কমিশনার ও রাজউকের মতামত নেয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।

জমি নিজের দাবি করে উচ্চ আদালতের তিনটি বেঞ্চে আলাদা আলাদাভাবে শরণাপন্ন হন আসলামুল হক। পরে আদালতের নির্দেশে সরকারি ৮টি সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ৩ মাস পর তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে নদী রক্ষা কমিশন। তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ হরিলুটের তথ্য। মাইশা পাওয়ার প্ল্যান্ট ও আরিশা ইকোনমিক জোনের নাম দিয়ে দখলকৃত নদীর জায়গার মধ্যে প্রায় ১৩ একর জায়গা পুরোপুরি নদীর, প্রায় ৮ একর তীর ভূমি ও বন্দরসীমা এবং বাকি জায়গা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপের আওতাভুক্ত বন্যাপ্রবণ এলাকা। যেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা করার আইনি বৈধতাই নেই।

যদিও আসলাম শুধু দখলই করেননি, পাওয়ার প্ল্যান্ট ও অন্যান্য স্থাপনা দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। নদী কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাপজোক করায় প্রতিবেদনে কোনো ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। যৌথ জরিপে বলা হয়, অতিদ্রুত দখলদার নিজে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নদীর জায়গা ফিরিয়ে না দিলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সব গুঁড়িয়ে দিতে বলা হয়েছে। যার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে হবে অবৈধ দখলদারকেই।