২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১০:০৬
শিরোনাম:

ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে প্রতারিত হওয়া শত শত নারী গৃহকর্মী দেশে ফিরতে পারছেন না

ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে প্রতারিত হওয়া শত শত নারী গৃহকর্মী দেশে ফিরতে পারছেন না করোনা নেগেটিভ সনদ না থাকায়। সব হারানো নির্যাতিত-অসহায় এসব নারী গৃহকর্মী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের ফিমেল ডিপোর্টেশন সেন্টার এবং বাংলাদেশ দূতাবাস পরিচালিত সেফহোমে দেশে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

অন্যদিকে বেসরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা করাতে জনপ্রতি এক হাজার থেকে দুই হাজার রিয়েল (প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা) প্রয়োজন। সব হারিয়ে নিঃস্ব গৃহকর্মীদের এই ব্যয় বহনের সামর্থ্য নেই। এ প্রেক্ষাপটে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস ওই নারীকর্মীদের দ্রুত দেশে ফেরানোর স্বার্থে পিসিআর টেস্ট বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার বিদেশফেরত সবার জন্য করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করেছে। বিপত্তি বেঁধেছে এখানেই। ফিমেল ডিপোর্টেশন সেন্টার ও সেফ হোমে আশ্রয়গ্রহণকারী অধিকাংশ নারী গৃহকর্মী ইতোমধ্যে অবৈধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে সৌদি আইন অনুযায়ী সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা করানো সম্ভব নয়।

সূত্র জানায়, ৩ ডিসেম্বর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ওই নারী গৃহকর্মীদের পিসিআর টেস্টের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়েছে দূতাবাস। এর পরিবর্তে দূতাবাস থেকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে শুধু শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে তাদের বিমান ভ্রমণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ডিসেম্বর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এই গৃহকর্মীরা দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে বিমানে আরোহণের আগে কমপক্ষে এক মাসেরও বেশি সময় (ক্ষেত্র বিশেষে ৩-৬ মাস) ফিমেল ডিপোর্টেশন সেন্টার ও দূতাবাসের সেফ হোমে অবস্থান করেন। এ সময়ে তারা করোনা ভাইরাসমুক্ত কিনা, সে বিষয়ে যথাযথভাবে মেডিক্যাল চেকআপ করা হয়ে থাকে। এখানে তারা প্রকৃতপক্ষে কোয়ারেন্টিন ও যথাযথ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে অবস্থান করেন। এ কারণে বিমানে আরোহণের আগে তাদের পিসিআর পরীক্ষার প্রয়োজন আছে মর্মে প্রতীয়মান হয় না। বেসরকারি হাসপাতালে তাদের পিসিআর টেস্ট করার জন্য সরকারি বরাদ্দ নেই বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

দূতাবাসের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনাজনিত লকডাউন প্রত্যাহারের পর পুনরায় অসহায় বাংলাদেশি নারীকর্মীরা আশ্রয়ের জন্য নিয়মিতভাবে দূতাবাসে আসতে শুরু করেছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ পরিচালিত কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রেও নারীকর্মীরা আশ্রয়গ্রহণ করছেন। সম্প্রতি সৌদি কর্তৃপক্ষ এই নারীকর্মীদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়ে দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, আশ্রয় নেওয়া নারীকর্মীদের বিমানে আরোহণের আগে দূতাবাস থেকে তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয় এবং প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে ইতিপূর্বে তাদের কোনোরকম পরীক্ষা ছাড়াই বিমানে ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা বাস্তবায়ন করব। তবে করোনার ন্যূনতম কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত। নইলে বিমানের অন্য যাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকা এই নারীকর্মীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে ভিডিও প্রচার করতে পারে। এতে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরবে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি নারীকর্মী গেছেন। তাদের প্রায় শতভাগই সৌদি আরবে গেছেন গৃহকর্মী হিসেবে। তাদের অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে, সৌদি আরবে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সময় পার করে দেশে ফিরেছেন। কেউ কেউ ফিরেছেন লাশ হয়ে। দেশে ফেরার আগে নির্যাতিত অসহায় নারীকর্মীদের ঠাঁই হয় সৌদি কর্তৃপক্ষের ফিমেল ডিপোর্টেশন সেন্টার ও দূতাবাস পরিচালিত সেফ হোমে। দৈনিক আমাদের সময়