১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১১:২৯
শিরোনাম:

বাংলাদেশ থেকে নৌকা করে রোহিঙ্গা পাচারের ভয়াবহ দৃশ্য উঠে আসল এক ভিডিওতে

বাংলাদেশ থেকে নৌকা করে রোহিঙ্গা পাচারের ভয়াবহ দৃশ্য উঠে আসল এক ভিডিওতে। এতে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের নির্মমভাবে পেটাচ্ছে মানবপাচারকারীরা।

কাতারভিত্তিক আলজাজিরা জানায়, বার্তা সংস্থা এএফপি এ ভিডিও প্রকাশ করে। এক মানবপাচারকারীর মোবাইলে ভিডিওটি ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ওই মানবপাচারকারী নৌকাটি থেকে পালিয়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকায় অভিবাসন প্রত্যাশী কয়েক ডজন রোহিঙ্গা, যাদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসছিল।

মাছ ধরার নৌকায় ডেকের উপরে নিচে ঠাসাঠাসি করে রোহিঙ্গারা খালি গায়ে কেউ বসে আছেন কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে এক রোহিঙ্গাকে পেঠাচ্ছে মানবপাচারকারীরা। রোহিঙ্গা সঙ্গে মানবপাচারকারীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে এ ঘটনা দেখা যায়। মানবপাচারকারীদের একজন এক হাতে দড়ি ধরে এক রোহিঙ্গাকে ধাক্কা মারছে এবং লাথি মারছে। অন্যহাতে চাবুক নিয়ে বাকি রোহিঙ্গাদের দিকে উপর্যুপরি আঘাত করছে।

এক মাস অনুসন্ধানের পর এ বিষয়ে টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা কিশোর থেকে বক্তব্য পায় এএফপি। ১৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ ওসমান বলে, ‘আমরা খাবার নিয়ে অভিযোগ তোলায় তারা আমাদের মারা শুরু করেছিল।’

সে আরও বলে, ‘পর্যাপ্ত ভাত ও পানি চাওয়ায় তারা আমাদের এলোপাথাড়ি মারধর করছিল।’ চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে মানবপাচারকারীদের সহায়তায় বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল নৌকাটি। তবে সেখানে নামতে না পেরে এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশে ফেরত আসে।

মাছ ধরার নৌকাটিতে ছিলেন ওসমানের প্রতিবেশী এনামুল হাসানও। ১৯ বছর বয়সী এ রোহিঙ্গা জানান, রোহিঙ্গাদের প্রতিবাদের মুখে মানবপাচারকারীদের একজন আরেক নৌকায় করে পালানোর সময় নিজের ফোনটি পেছনে ছুড়ে মারলে তিনি লুফে নিয়েছিলেন।

মোবাইলটিতেই রোহিঙ্গাদের পেটানোর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল। এএফপি নিশ্চিত হয়েছে, নৌকাটিতে ছিলেন ওসমান এবং হাসান দুইজনই, ভিডিওটিতে তাদের শনাক্ত করা হয়।

এ দুই রোহিঙ্গা থেকে জানা যায়, মারধর, অনাহার ও অসুস্থ হয়ে নৌকাটিতে অন্তত ৪৬ জন রোহিঙ্গা মারা যান। এতে বাকি রোহিঙ্গারা আরও বেশি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। হাসান বলেন, ‘এরপরেও মানবপাচারকারীরা আমাদের চুপ করিয়ে রাখে এবং হুমকি দেয়, আমাদের জন্য কোনো জায়গা নেই। আমরা যদি আওয়াজ করি তাহলে তারা আমাদের মেরে ফেলবে।’

‘আমরা বুঝলাম, এভাবে চলতে থাকলে আমরা মারা পড়ব। আমরা ছিলাম এক প্রকার জাহান্নামের মধ্যে। ফলে কিছু করার তাগিদ অনুভব করলাম। তখন আমরা নৌকার এক কর্মীর ওপর হামলা চালালাম, কারণ আমাদের হারানোর কিছু ছিল না। এটি ছিল জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ।’

এ রোহিঙ্গা আরও বলেন, ‘পাচারকারীদের আমরা হত্যার হুমকি দিলাম, যদি তারা আমাদের পাড়ে নামিয়ে না দেয়। পরবর্তীতে তারা নৌকায় আগুন লাগিয়ে দিয়ে আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হুমকি দেয়। তখন আমরা আবার চুপ হয়ে গেলাম।’ ‘কয়েকদিন পর ছোট একটা নৌকা দেখা দিলে দুইজন ছাড়া বাকি মানবপাচারকারীরা সেটি করে পালিয়ে যায়। রোহিঙ্গাদের শান্ত থাকতে বলা হয়, তাহলে তাদের বাংলাদেশের উপকূলে নামিয়ে দেয়া হবে।’ হাসান বলেন, ‘দুইদিন পরে তারা আমাদের বাংলাদেশে নামিয়ে দেয় এবং দুই মানবপাচারকারী পালিয়ে যায়।’