১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১১:৫৩
শিরোনাম:

আহম্মদ শফির মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে, সরকারের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি

চট্টগ্রামে আল্লামা শাহ আহমদ শফির জীবনকর্ম, অবদান শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর প্রেস ক্লাবে আহম্মদ শফির অনুসারীরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব আল্লামা মুফতি ফয়জুল্লাহ।

এ মতবিনিময় সভায় বিপুল সংখ্যক আলেম-ওলামা অংশ গ্রহণ করে আহম্মদ শফির জীবনদর্শন নিয়ে আলোচনা করেন।

আল্লামা মুফতি ফয়জুল্লাহ অভিযোগ করেন, আহম্মদ শফির মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে সরকারের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন তিনি।

এছাড়া আন্দোলনকে যেমন সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে, তেমনি যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকার করার জন্য আলেম-ওলামাদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় তিনি আরও বলেন, এখন থেকে আমরা সামনে যাব, পেছনের দিকে যাব না। যারা ষড়যন্ত্র করেছে, মিথ্যাচার করেছে, অর্থের যোগান দিয়েছে, তারাই হেফাজতে ইসলামের মূল শত্রু।

কারা ঢাকায়, ফটিকছড়ি কিংবা হাটহাজারীতে ষড়যন্ত্র করেছে সময় হলেই জাতির কাছে সব প্রকাশ করারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আল্লামা মুফতি ফয়জুল্লাহ।

এ সময় তিনি আরও অভিযোগ করেন, জালেমরা জুলুম-অত্যাচার চালিয়েছে আহম্মদ শফির ওপর। পূর্ব-পরিকল্পিত উপায়ে হুজুরের সাথে বেয়াদবি করেছে। নির্মমভাবে আহত করা হয়েছে তাকে।

এ সময় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাইনুদ্দীন রুহী অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে আল্লামা আহমদ শফিকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে, এমন দাবি করেন তিনি।

এসময় হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে উদ্দেশ্য করে মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, আপনি অনেক বহুরুপী। আপনার সাথে আমার এক সময় ভালো যোগাযোগ ছিল। আপনি হেফাজতের সাথে প্রতারণা করেছেন। আপনি একজন বড় প্রতারক। রুমের মধ্যে এক রকম, বাহিরে গেলেই অন্য রকম। সরকারের সাথে কোথায় গেছেন, পায়ে ধরেছেন জানা আছে। সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য নির্যাতনের কথা বলে আলেম-ওলামাদের প্রশাসনের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছেন। প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।

অনুষ্ঠান থেকে হেফাজতের ইসলামের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে পুনরায় সবাইকে নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছেন হেফাজত ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী।

এছাড়া দেশের অনেক বিতর্কিত সংগঠনের সাথে বাবুনগরী হাত মিলিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সময় মতো মুখ খুললে টিকে থাকতে পারবেন না। ১৫১ জনের কমিটির মধ্যে আপনার আত্মীয় আছে ২২ জন। স্বজনপ্রীতি করেছেন, মেয়ের জামাই থেকে শুরু করে মামাত ভাই, খালাত ভাই সবাইকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন।

এ অনুষ্ঠানে আরেক বক্তা হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সলিমুল্লাহ বলেন, শাপলা চত্বরের ঘটনার দায়ভার জুনায়েদ বাবু নগরীকে নিতে হবে। সেই কর্মসূচির মিটিংয়ে অনেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে বললেও বাবুনগরী সারারাত সেখানে অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন। তিনি আল্লামা শফিকে জানান, সারা দেশ থেকে ছেলেরা আসবে। সবাই সারারাত থাকলে সেনাবাহিনী আসবে। তার আগে আল্লামা শফিও সিদ্ধান্ত নেন ছয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে। কিন্তু তিনি হুজুরকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দিয়েছেন। পরে রাজধানীর শাপলা চত্বরে নিহতদের পরিবারের জন্য ফান্ড কালেকশনের কথা বললেও তিনি করেন নি।

সেদিন আল্লামা শফি মুখ ফুটে কোনো শব্দ বলেনি। শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠান ৬টায় শেষ করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান হেফাজত আমিরের নিজের ইচ্ছায় শাপলা চত্বরের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেন। শাপলা চত্বরে যারা আহত হয়েছিল তাদের জন্য ফান্ড গঠন করার কথা ছিল। কিন্তু বাবুনগরীর খামখেয়ালির কারণে সেটিও করা হয়নি বলে অভিযোগ সলিমুল্লাহর।

বাবু নগরীকে জেল থেকে ছাড়াতে সেদিন আমরা নগরীর দেবপাহাড়ে একটি ভবনে তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছিলাম। আর এখন বাবু নগরী আমাদের দালাল বলেন। এছাড়া ৫ মের শাপলা চত্বরের ঘটনার জন্য পুরোপুরি দায়ী জুনায়েদ বাবুনগরী।

হেফাজত ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা আহম্মদ শফির শেষ তিন দিনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আলেম-ওলামারা। তারা অভিযোগ করে বলেন, হাটহাজারী মাদরাসায় হামলা, ভাঙচুর হয়েছে। আল্লামা শফির ওপর তিলে তিলে নির্যাতন করা হয়েছে।

একজন সন্তান বাবার জানাজায় আসতে পারবে না, এ কেমন অবিচার। আনাস মাদানীর আব্বার জানাজায় আসতে পারে নাই কেন? এর থেকে বড় জুলুম আর কি হতে পারে। বলেন তিনি।

গৃহবন্দি করে তিলে তিলে নির্যাতনের মাধ্যমে শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। খাবার, ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ ছিল। এটাই হত্যার মূল কারণ। তদন্ত হলে কাদের এত ভয়! সমস্যাটা কোথায়। প্রশ্ন তোলেন আলেম-ওলামারা। সরকারের কাছে তদন্ত করারও দাবি জানানো হয়।

যারা শফি হুজুরের পক্ষে ছিল তাদের ওয়াজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। বর্তমানে পুলিশ হুজুরদের দেখলে তল্লাশি করে, সন্দেহ করে। জায়গায় জায়গায় আটকায়। আগে তো এমন হয়নি। আহম্মদ শফির ওপর নির্যাতনের পরে এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এই সব নির্যাতনের কুফল বলে অভিযোগ করেছেন বক্তারা।