১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:১২
শিরোনাম:

মৃত্যুদণ্ড এড়াতে কারাগারে ৪ তলা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায় রুবেল (ভিডিও)

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালানো আলোচিত হাজতি ফরহাদ হোসেন রুবেলকে নরসিংদীর তার ফুফুর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়েএ তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে নরসিংদী জেলার আদিয়াবাদ শেরপুর কান্দাপাড়া চরাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় রুবেলকে কোতোয়ালী থানায় নিয়ে আসা হয়। ফরহাদ হোসেন রুবেল কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে থাকতেন।

গত শনিবার (৬ মার্চ) ভোর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় জেলার রফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় রুবেলকে গ্রেপ্তারে সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর এর নির্দেশনায় এডিসি (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ এর তত্বাবধানে সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমার নেতৃত্বে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কবির হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ জাবেদ উল ইসলাম সহ এসআই মোহাম্মদ আইয়ুব উদ্দিন, এএসআই রণেশ বড়ুয়া, সদরঘাট থানার এএসআই মোঃ ফয়েজ সহ পুলিশের আরো ০৫টি টিম বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আসামী মোঃ ফরহাদ হোসেন প্রকাশ রুবেল (২০) কে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করে সিসি ক্যামেরার ‍ফুটেজ ও রুবেলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এডিসি(দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ জানান, শনিবার ভোরে নিয়মিত কার্যক্রম অনুযায়ী কারাগারে ওয়ার্ড ও সেলের তালা খোলা হয়। এর কিছুক্ষণ পর বন্দি গণনার কাজ শুরু হলে কর্ণফুলী ভবনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে রুবেলকে অনুপস্থিত দেখা যায়। কারারক্ষী নাজিম জানান, রুবেল ভোর সোয়া ৫টায় ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা যায়, রুবেল ওই ভবনের নিচে নেমে ট্যাংক থেকে পানি নিয়ে চোখেমুখে ঝাপটা দিতে দেখা যায়। এরপর ডান পাশের গেইট দিয়ে বেরিয়ে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ গজ দূরে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ৪ তলায় উঠে ভোর আনুমানিক ৫টা ৩০ মিনিটের সময় ওই ভবনের ৪ তলা থেকে লাফ দিয়ে কারাগারের নিরাপত্তা প্রাচীরের বাইরে চলে আসেন। পলাশ কান্তি নাথ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল আরও জানায়়, সেখান থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে যান এবং পরে রেল যোগে ঢাকা হয়ে নরসিংদী পালিয়ে যান । আসামি রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য জানা যাবে বলে জানান। নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) নোবেল চাকমা জানান, লাফিয়ে পড়ার পর তার বাম পা মচকে গেছে। সেই পা নিয়েই সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে রুবেল চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যান। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ রুবেল ট্রেনযোগে ঢাকা হয়ে নরসিংদী যান।

তিনি বলেন, একটা মানুষ লাফ দিয়ে ৬০ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবে সে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত প্রাপ্ত। সুস্থ হলে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, রুবেল হত্যা মামলার আসামি। খুব সম্ভবত তার ধারণা হয়েছে যেহেতু খুন সে করেছে তার ফাঁসি হবেই। তার বিরুদ্ধে আরও পাঁচটা মামলা আছে।

এসব বিষয় মানসিকভাবে তাকে দুর্বল করে তাই এত উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়া বিপদজনক জেনেও পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে থাকতে পারে। সে ফাঁসি এড়াতে পারবে ভেবেই সে এতবড় ঝুঁকি নেয়। ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করে সাফল্য পেয়েছি। আমাদের পাঁচটি টিম কাজ করেছে। গ্রেপ্তারকৃত রুবেলকে জেল থেকে পালানোর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি নেজাম উদ্দিন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আইয়ূব উদ্দিন জানান, শনিবার কারাগার থেকে পালিয়ে নরসিংদীতে প্রথমে রুবেল তার নিজের বাড়ি মীরকান্দিতে যান। সেখান থেকে ফুপুর বাড়ি আদিয়াবাদে চলে যান।

সেখানে ফুপুর বাড়ির পাশে একটি চরের মধ্যে ঝোঁপঝাড়ের ভেতরে লুকিয়ে তিন রাত ছিল রুবেল। হৃদয় নাম দিয়ে নরসিংদীর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করতে চেয়েছিল এবং তার খরচের জন্য একজন নিকটাত্মীয়র কাছে থাকা তার একটা চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ফুপাত ভাইয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এর আগেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।