৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৯:৫৮
শিরোনাম:

করোনার সংক্রমণ রোধ ও জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণে আবারও মাঠে পুলিশ, মাস্ক বিতরণ

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে জনসাধারণের মাস্ক পরা নিশ্চিত ও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আবারও মাঠে নেমেছে পুলিশ। ‘মাস্ক পরার অভ্যাস, কোভিডমুক্ত বাংলাদেশ’ স্লোগানে রোববার দেশজুড়ে এই বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু করছে পুলিশ। সড়কে থাকবে পুলিশি নজরদারি।

ইতোমধ্যে রোববার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ডিএমপির তেজগাঁও জোনের উদ্যোগে করোনার বিরুদ্ধে ‘বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচী শুরু করেছে পুলিশ। করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনার পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে মাস্ক বিতরণ।
এদিকে রোববার দুপুরে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে রাজধানীর শান্তিনগর ট্রাফিক পুলিশ বক্স সংলগ্ন মোড়ে পথচারী ও জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে করোনা মোকাবিলায় ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে সম্প্রতি রাজারবাগ এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে চার হাজার মাস্ক বিতরণ করেন উপপুলিশ কমিশনার (ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইঞা। গত ১৮ মার্চ রাজারবাগ রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ২১ মার্চ (আজ রোববার) থেকে ‘মাস্ক পরার অভ্যেস, কোভিডমুক্ত বাংলাদেশ’ স্লোগানে দেশব্যাপী বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

ওই সময় তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ গতমাস পর্যন্ত কম থাকলেও মার্চ মাস থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে আইজিপি বলেন, করোনার যে স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই মানতে হবে। বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

আইজিপি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এ সময় কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করা হবে। এ সময় দরকার হলে পুলিশ জনগণের মাঝে মাস্কও বিতরণ করবে। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পুলিশের সঙ্গে এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাদের সাদর আমন্ত্রণ জানান আইজিপি।

পুলিশ জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। পুলিশ সদস্যরা মরদেহ সৎকার করেছে। খাবার বিতরণ করেছে। এ পর্যন্ত পুলিশের ৮৭ জন সদস্য করোনায় মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ২০ হাজারের অধিক সদস্য। ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের এক বছর পার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফল উদ্যোগ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব এবং দেশের জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা করোনা মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছি। করোনা মোকাবেলায় যে ৮টি দেশ সাফল্য দেখিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। করোনা মোকাবেলায় সাফল্যের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম। আবার, করোনার টিকা পাওয়া ২২টি দেশের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দেশের ৪৫ লাখ মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন। করোনার টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। আমাদের দেশের লোকসংখ্যা ১৮ কোটি। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রম গতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় শিথিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আইজিপি বলেন, গত এক বছরের মধ্যে ফেব্রæয়ারিতে সবচেয়ে কম আক্রান্ত ছিল। মার্চে আবার ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৬ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন, তবে এটা প্রথম ডোজ। এক ডোজে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব না, দুই ডোজ লাগে।

অবহেলা ও অবজ্ঞা করে করোনা থামানো যাবে না। আইজিপি বলেন, আমরা আকস্মিকভাবে বর্তমানে করোনা সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করছি। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদেরকে করোনা সংক্রমণ মোকাবেলা করতে হবে। আবার দেশের অর্থনীতিও সচল রাখতে হবে। আমরা চাই না, অনাকাক্সিক্ষতভাবে কেউ অসুস্থ হোক অথবা কারও মৃত্যু হোক। এজন্য করোনা মোকাবেলায় প্রত্যেককে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে ভুলে না যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান আইজিপি। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতেও অনুরোধ করেন তিনি। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের সকলকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে। সম্ভব হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। জনসমাগম বা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় গেলে সেখান থেকে বাসায় ফিরে কাপড় খুলে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনগণকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা হবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমরা ঠিক ‘বাধ্য’ কথাটা বলছি না। আমরা তাদের প্রেষণা ও প্রেরণা দিয়ে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। তাছাড়া মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে কেন? মানুষ নিজের দায়িত্ববোধ থেকে নিজের ও পরিবারের জন্য মাস্ক পরবে বলে আশা করছি। সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এ সময় কোনও ধরনের সভা-সমাবেশ আয়োজন না করাই ভালো। কোনও ধরনের সভা-সমাবেশ করতে হলে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি পাওয়া গেলেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে তার আয়োজন করতে হবে।

করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় পুলিশের নেয়া উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- করোনা প্রতিরোধে পুলিশের নির্দেশিকা বিতরণ, বাংলাদেশ পুলিশের লোগো সম্বলিত ফ্রি মাস্ক বিতরণ, করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ, সচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে ভ‚মিকা রাখা, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন, পুলিশের অব্যবহৃত স্থাপনা আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রূপান্তর, ইমিগ্রেশন পুলিশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত আগত কলের সাড়া দেওয়া, পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে কোভিড পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়া, পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ ছাড়া অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া প্রভৃতি।