৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:০০
শিরোনাম:

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদীকে চায়না হেফাজত, শাল্লার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দাবি

সোমবার (২২ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উৎযাপন উপলক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। এসব প্রোগ্রামে অতিথি হিসেবে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ আসবেন। অতিথিদের তালিকায় রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে- স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উৎযাপন উপলক্ষ্যে এমন কাউকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসা উচিত নয়, যাকে এদেশের মানুষ চায় না, বা যার আগমন এদেশের মানুষকে আহত করবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদী একজন মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত। তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে গুজরাটে মুসলমানদের উপর পরিচালিত ভয়াবত হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার মতো নয়। মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঐহিতাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংস এবং সেখানে অন্যায়ভাবে মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত এখনো আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এ ছাড়াও কাশ্মীরে নৃশংস মুসলিম নির্যাতন, নাগরিকত্ব আইনসহ প্রতিটি মুসলিম বিরোধী সিদ্ধান্তের মূল হোতা এই নরেন্দ্র মোদী। বছরখানেক আগে তার অনুসারীদের হাতে দিল্লীতে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদের মিনার ভেঙে সেখানে হিন্দুত্ববাদী গেড়ুয়া পতাকা টানানো হয়েছে।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের নামে আসামে লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে বাংলাদেশী অভিহিত করে অনেকটা বন্দি করে রাখা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার মুসলমানদেরকেও অনিরাপদ অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একাধিকবার নরেন্দ্র মোদী তার ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী অভিহিত করে তাদেরকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে না দিলে ভারতের মানুষেরা চাকরি পাচ্ছে না বলে উস্কানি দিয়েছে। আজ ভারতের মুসলমানদেরকে ঠুনকো অজুহাতে প্রকাশ্য রাজপথে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের অপ্রাপ্তি ও অসন্তোষের তালিকাও বেশ দীর্ঘ। গঙ্গার পানি চুক্তি যে প্রত্যাশার পরিবেশ তৈরি করেছিলো, তার বাস্তবায়ন হয়নি। তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তি পেছাতে পেছাতে এখন তালিকা থেকেই বাদ পড়ে গেছে। ভারতের নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যা করে যাচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। পৃথিবীর সবচেয়ে শত্রুপ্রবণ ইসরায়েল ফিলিস্তিন সীমান্ত কিংবা পাক-ইন্ডিয়া বর্ডারেও এমন নির্বিচার হত্যার ঘটনা ঘটে না।

সচেতন পর্যবেক্ষকদের মতে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে পরিকল্পিত ছক অনুযায়ী সংখ্যালঘু নিপীড়নের নাটক সাজানো হচ্ছে। এর দ্বারা নরেন্দ্র মোদী ও তার সহযোগী উগ্র হিন্দুত্ববাদী কাপালিক গোষ্ঠী নির্বাচনে ফায়েদা হাসিল করতে চাইছে। আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে হিন্দুস্তানের নীলনকশা বাস্তবায়নের কেন্দ্র বানাতে দিতে পারি না এবং আমরা কাউকে এমনটা করতে দিবো না।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের এক শিয়া নেতা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ২৬ টি আয়াত বাতিল চেয়ে কোর্টে রিট করেছে। এই রিটের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীর মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ আল কুরআনের কোন আয়াত থাকবে আর কোন আয়াত থাকবে না এটা কি মোদী সরকার আর তাদের আদালত ঠিক করে দিবে? এমন স্পর্ধা আর ধৃষ্টতা কোনো মুসলমানের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। ভারতের এহেন কর্মকান্ডে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের মানুষ চরম বিক্ষুব্ধ। সে কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তির এই গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে নরেন্দ্র মোদীর মত একজন মুসলিম বিদ্বেষী ব্যক্তি আসুক এটা আমরা চাই না।

আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দেশের অধিকাংশ মানুষের সেন্টিমেন্টের প্রতি সম্মান জানিয়ে নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণ বাতিলের আহবান জানাই। অন্যথায় পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। আমরা পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, মুসলমান হিসেবে ঈমানী দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের দায়বোধ থেকেই নরেন্দ্র মোদীর আগমনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে জনৈক ঝুমন দাসের ফেসবুকে কটুক্তির প্রতিবাদে এই হামলা হয়েছে। এভাবে কোনো ধরনের নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই এই ঘটনার দায় হেফাজতে ইসলামের উপরে চাপানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ দুদিনের মাথায় জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই বর্বরোচিত ঘটনার সাথে হেফাজতে ইসলাম বা মাওলানা মামুনুল হকের দূরতম কোনো সম্পৃক্ততাও নেই।

গত ১৫ মার্চ সোমবার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শানে রেসালাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব এবং মাওলানা মামুনুল হকসহ আরও অনেকেই বক্তব্য রাখেন। সেদিন রাতে শাল্লা উপজেলার বাসিন্দা ঝুমন দাস আপন নামক এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাওলানা মামুনুল হক এর বিরুদ্ধে কটূক্তি করলে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয় এবং পরদিন মঙ্গলবার রাত ১১টায় তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কটূক্তিকে কেন্দ্র করে ঘটনার সেখানেই শেষ। পরের দিনের হামলার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।