৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:২২
শিরোনাম:

পোশাক বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান লুবনানের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি ৬০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন, মামলা দায়ের

পোশাক বিপণনকারী লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মঙ্গলবার মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ছে, একজন গ্রাহকের সুনির্দিষ্ট ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ থাকায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি সংস্থার সহকারী পরিচালক মো. মাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর বাড্ডা লিঙ্ক রোডের হোমস্টিড গুলশান লিংক টাওয়ারের ১২ তলায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির কারখানা এবং অফিসে অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠানটির মূসক নিবন্ধন নং- ০০০৮৪১৭৯২-০১০১। প্রতিষ্ঠানটির মূলত তিনটি ব্রান্ড হচ্ছে- রিচম্যান আ্যাপারেলস, ইনফিনিটি মেগা মল ও লুবনান এথনিক উইয়ার। রাজধানীর বড় বড় শপিংমলসহ সারাদেশে ১০৮টি বিপনী কেন্দ্র রয়েছে।

অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানের উপস্থিত প্রতিনিধির সহযোগিতায় বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ১০৮টি শাখার জমাকৃত মূসকের সারসংক্ষেপের হিসাব (রিটার্ন অনুযায়ী), বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট, কর্পোরেট চালানের কপি ও আমদানি এলসিগুলোর তথ্যসহ আনুষাঙ্গিক বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য দপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ভ্যাট গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানটির মূসক ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য অনুযায়ী তদন্ত মেয়াদে বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৭ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৮ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়েছে। বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রযোজ্য এই ফাঁকিকৃত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯৫ লাখ ২০ হাজার ৯২৯ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।

অন্যদিকে তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৩৬৮টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ লাখ ১৩ হাজার ৭১২ টাকার ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাস ভিত্তিক গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৫ হাজার ১৮ টাকা সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তদন্ত মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎসে ভ্যাট ৩ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৫ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৯৪ হাজার ১৪ হাজার ৭০০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৫ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়।

উৎসে কর্তনের উপর প্রযোজ্য এই ফাঁকিকৃত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪০ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে। তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪ টাকা এবং সুদ বাবদ ১ কোটি ১০ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৭ টাকাসহ ৪, কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার ৪৪২ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।

তদন্তে ভ্যাট গোয়েন্দা আরও দেখতে পেয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে মাসিক রিটার্নে অসত্য তথ্য দেওয়া এবং ভুয়া ভ্যাট চালান ইস্যু করা। এসব অনিয়ম ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ এনে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেছে। তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম প্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরে পাঠানো হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।