৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৫:২০
শিরোনাম:

এক পিস ইয়াবার টাকার জন্যও মানুষ খুন করে তারা

রাজধানীর খিলক্ষেতে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে এনামুল (৩০) ও রাসেল (২৮) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহতরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্র গামছা পার্টির সদস্য।

তারা অটোরিকশায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই করে বেড়াতেন। গত সোমবার দিনগত রাত দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত খিলক্ষেত ফ্লাওভারে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ ও খিলক্ষেত থানা পুলিশের সমন্বিত দলের সঙ্গে সশস্ত্র ছিনতাই দলের সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা, একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলিভর্তি একটি ম্যাগাজিন, একটি ছুরি, দুই বাক্স মলম, একটি গামছা, ৯টি মুঠোফোন, ১৬টি ইয়াবা বড়ি ও পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গোলাগুলি থামলে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ নয়ন ও ইয়ামিন নামে দুই সিএনজি অটোরিকশার ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করে। যারা এক পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের ৩০০ টাকার জন্য মানুষ খুনও করতে দ্বিধাবোধ করে না বলে পুলিশের ভাষ্য।

ডিবি পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, লকডাউনের কারণে গত রমজান মাসে ও ঈদুল ফিতরের সময় দূরপাল্লার বাস ও সিটিবাস না চলায় লাখ লাখ মানুষ বিকল্প বাহনে ঢাকা ছেড়েছেন এবং ঢাকার অভ্যন্তরে যাতায়াত করেছেন। গভীর রাতেও এই যাতায়াত অব্যাহত ছিল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক সময় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং মালবাহী ছোট পিকআপ যাত্রীদের আনা-নেয়া করেছে। কয়েকটি ডাকাত চক্র গণপরিবহনের এই স্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে রাইড শেয়ারের নামে মানুষের সর্বস্ব ছিনতাই করে নেয়। তদন্তে এ তথ্য উঠে আসলে ছিনতাইকারী চক্র ধরতে তৎপর হয় ডিবি পুলিশ।

তিনি আরও জানান, সোমবার দিনগত রাত সোয়া ২টার দিকে কাওলা হয়ে পূর্বাচলগামী ফ্লাইওভারের মুখে ডিবি পুলিশের একটি দল সবুজ রঙের একটি অটোরিকশাকে থামার সংকেত দেয়। কিন্তু গাড়ি না থামিয়ে চালক দ্রুত সটকে পড়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি ফ্লাইওভারের মাঝামাঝি থাকা চেকপোস্টে পুলিশের আরেকটি দলকে জানিয়ে অটোরিকশার পিছু ধাওয়া করে গোয়েন্দা পুলিশের দলটি। চেকপোস্টে থাকা দলটি তখন আড়াআড়ি মাইক্রোবাস রেখে ফ্লাইওভারের পথ আটকে দেয়। এসময় অটোরিকশা থেকে দুইজন নেমে দৌড়ে মাইক্রোবাসের দিকে গুলি ছুড়লে বাঁ পাশের কাঁচ ভেঙে যায়। আত্মরক্ষায় ডিবি পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলি থামলে ফ্লাইওভারের উপরে পড়ে থাকা এনামুল ও রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরে ফ্লাইওভারের ওপরে অটোরিকশার চালকের আসন থেকে নয়ন এবং পাশের আসন থেকে ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে নিহত ও গ্রেপ্তারদের তল্লাশি করে অস্ত্র, গুলি, ছুরি, গামছা, ইয়াবা ট্যাবলেট, লাইটার, নগদ টাকা ও চেতনানাশক ওষুধ জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়ে উপ-কমিশনার মশিউর বলেন, ‘ঈদের আগে-পরে গভীর রাতেও মানুষ যাতায়াত করেন। গণপরিবহন না পেয়ে অনেকে অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও ছোট পিকআপেও উঠছেন। ছিনতাইকারীরা এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছিল। নিহতরাসহ চারজন সোমবার মধ্যরাতে প্রথমে টঙ্গীর মধুমিতা এলাকায় একত্রিত হয়ে আব্দুল্লাহপুর খন্দকার পেট্রোলপাম্পে আসে। ছিনতাইয়ের জন্য সেখানে “উপযুক্ত মক্কেল” না পেয়ে বিমানবন্দর হয়ে কাওলার দিকে রওনা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল, পথে কোনো ব্যক্তিকে একা পেলে অটোরিকশায় তুলে তারা মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা এবং মূল্যবান সামগ্রীসহ সবকিছু ছিনিয়ে নেবে। চক্রটি ছিনতাইয়ের কাজে মূলত গামছা এবং মলম ব্যবহার করত। কেউ বাধা দিলে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে ফেলে দিত। ’

উপ-কমিশনার মশিউর রহমান আরও জানান, ঢাকায় বেশ কয়েক মাস ধরে কিছু দিন পরপর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কখনও কখনও বিভিন্ন সড়ক, ফ্লাইওভার এবং নির্জন জায়গায় মানুষের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কিছু দিন আগে একজন প্রবাসীর লাশ পাওয়া যায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারে। এগুলো মাদকাসক্ত সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চালকদের কাজ- যা তদন্তে জানা গেছে। মাদকের টাকার জন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় তারা। যাত্রীদের সিএনজি অটোরিকশা বা প্রাইভেটকারে তুলে প্রথমে সব কিছু কেড়ে নেয়। কেউ বাধা দিলে তাদের হাত, পা, মুখ গামছা দিয়ে বা স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তারা যাত্রীকে কোথাও ফেলে দেয়। মৃত এবং গ্রেপ্তার চারজনই মাদকাসক্ত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা এবং মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।

ইয়াবা সেবনের টাকা না পেলে এরা পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করে। বাইরের মানুষের জন্য তারা আরও ভয়ঙ্কর। তারা এক পিস ইয়াবার দাম ৩০০ টাকা পেলেই খুশি। কেবল এক পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের টাকা ছিনতাইয়ে বাধা পেলেও তারা মানুষ খুন করতে দ্বিধা করে না। গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত মাদকের টাকার জন্যই ছিনতাই করত। হত্যা তাদের উদ্দেশ্য না। তবে ছিনতাইয়ে বাধা পেলে ভিকটিমদের মুখ বা গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করেও হত্যা করতো চক্রের সদস্যরা। সুযোগ বুঝে পরে লাশ ফেলে দিত তারা ঝোপ-ঝাড় বা নীরব সড়কে। এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।