৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:০৮
শিরোনাম:

বাসাভাড়া দিতে না পেরে ঢাকা ছাড়ছে কর্মহীন নিন্ম আয়ের মানুষ

রাজধানীর ঝিগাতলায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন জুলহাস মিয়া। পেশায় কেয়ারটেকার। গেলো এপ্রিল মাসে চাকরি চলে গেছে। ভেবেছিলেন লকডাউন উঠে গেলে নতুন কোনো কাজ পেয়ে যাবেন। কিন্তু তা আর হয়নি। বাধ্য হয়ে শেষ পুঁজিটুকু দিয়ে দুই মাসের ঘরভাড়া মিটিয়ে ভোলার জুলহাস গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন এ মাসেই।

২০০৮ সালে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন কুলসুম। কলাবাগানের একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ প্রায় ১৩ বছর ধরে। গেল মার্চ মাসে মাসে কাজ হারিয়ে অপেক্ষা এখন অন্য কাজের। কুলসুম বলেন, গার্মেন্টস এখন আর কাজ দিতে চায় কি করে খাইবো। বাসা ভাড়া ৩ মাস হয় দিতে পারি না।

পণ্যের মতো শ্রম কেনাবেচা হয় রাজধানীর নয়াবাজার, মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর ওভারব্রিজের নিচে, ১৪ নম্বরের রাস্তার পাশে, মহাখালী ফ্লাই ওভারের নিচে, রেললাইনের ওপর, নাখালপাড়া রেলগেটে বড় মসজিদের সামনে, রেললাইনের পাশে ও সাতরাস্তার মোড়ে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শ্রম বিক্রি করেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বিনিময়ে।

প্রতিদিন ভোরে নানা বয়সী পুরুষ ও নারীরা আসেন এখানে কাজের খোঁজে। কারো হাতে কোদাল, কারো হাতে রং করার বালতি, কারো হাতে রাজমিস্ত্রীর যন্ত্রপাতি, আবার কেউ আসেন খালি হাতেই। গত তিন দিন শ্রমজীবী এসব মানুষের সঙ্গে কথা এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, কাজ না থাকায় এখন আর হাট আগের মতো জমে না।

এদের একজন হযরত আলী। তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলাম রুটি রুজির আশায়;কিন্তু এখানেও কাজ মিলছে না। একদিন কাজ পেলে তিন দিন বসে থাকতে হয়। শহরে থাইকা কি অইবো।

বেসরকারি সংগঠন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) তাদের সা¤প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, ঢাকা এবং অন্যান্য শহরের ৫৪ শতাংশের বেশি গৃহকর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। এসব কাজ হারানো নারীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ বিকল্প পেশায় নিযুক্ত হতে পেরেছেন।

এদিকে ঢাকার প্রায় বাড়িতে ‘টু লেট’ ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। বেশিরভাগ বাড়িওয়ালাই লোকসানে পড়েছেন। মোহাম্মদপুরে মোহাম্মাদীয়া হাউজিং লিমিটেডের সাত নম্বর রোডের বাড়িওয়ালা আশিকুর রহমান জানান, তার চারতলা বাড়ির দুই পরিবার জানুয়ারি মাসে বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। পাচঁ মাস হতে চললো ভাড়াটিয়ার দেখা নেই।

ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, এমন হবে সেটা শুরুতেই আন্দাজ করা যাচ্ছিল। এখন পর্যন্ত আমাদের হিসেবে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কেবল ভাড়া দিতে না পেরে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ভাড়া দিতে না পেরে অনেক বাসায় জিনিসপত্র রেখেই চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ যাওয়ার সময় আসবাব বিক্রি করে ভাড়া পরিশোধ করে গেছে।