২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:৩০
শিরোনাম:

‘ডেসটিনির গ্রাহকদের মতো জীবনভর চোখের পানি মুছতে চাই না’

‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ গ্রাহকের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, ধামাকা পাচার করেছে ১২০ কোটি, এমনকি ব্যবসায়ী পিকে হালদার প্রায় ১৫টির মতো প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। তাহলে কেন শুধুমাত্র ইভ্যালির রাসেলকে জেলে রাখা হয়েছে?

কথাগুলো ঢাকা পোস্টকে জানাচ্ছিলেন তৌফিক জুলফিকার নামে ইভ্যালির একজন গ্রাহক। তিনি ইভ্যালি থেকে ৩টি মোটরবাইকসহ মোট ১৪ লাখ টাকার পণ্য অর্ডার করেছিলেন।

তৌফিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্য কেউতো মুখে টাকা ফেরানোর নিশ্চয়তা দেয়নি। অন্তত রাসেল বলেছে দেবে। তাকে মুক্তি দিলে তিনি নিশ্চয়ই একটা সমাধানের পথ খুঁজবেন, তিনি জেলে থাকলেতো সবাই বঞ্চিত হবে। সরকার আর কয়টাকা ক্ষতিপূরণ? আমরা গ্রাহকরাই যেহেতু ভুক্তভোগী, তাই আমাদের দাবি ইভ্যালিকে আরও সময় দেওয়া হোক। দেখি ৫ মাসে কি করতে পারে ইভ্যালি। যেহেতু ইভ্যালিকে সবাই সময় দিয়েছে, আদালতের উচিৎ তার স্ত্রীর পাসপোর্টসহ তাদের সবধরনের সম্পদের দলিল জব্দ করে তাকে জামিন দেওয়া, নজরদারিতে রাখা। দেখি উনি ৫ মাসে কি করতে পারেন। তখন টাকা ফেরত দিতে না পারলে তাকে জেলে নেওয়ার দাবি জানাবো আমরা। আমাদের একটা আশার-আলো বেঁচে থাকুক অন্তত।

তৌফিকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সড়কে আন্দোলন করছে ইভ্যালির লাখ লাখ গ্রাহক। তাদের অধিকাংশের দাবি ‘সময় দেওয়া হোক’ ইভ্যালিকে।

সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ইভ্যালির কর্তা দুজনকে শর্ত দিয়ে হলেও ৫ মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া উচিৎ। ৫ মাস তাদের সুযোগ দিয়ে প্রয়োজনে আবারও জেলে নেওয়া উচিৎ। আমরা ডেসটিনির গ্রাহকদের মতো সারাজীবন চোখের পানি মুছতে চাই না।

ইভ্যালিকে সময় দিয়েছে ই-ক্যাব
ইভ্যালির অনুরোধে তাদের আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত গ্রাহকদের সমস্যার সমাধানের সময় দিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিভাবক ইক্যাব। ই-ক্যাবের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইভ্যালির ব্যবসা তো বন্ধ হয়ে যায়নি, চলমান রয়েছে। যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে তখন বলা যাবে যে সব শেষ হয়ে গেছে। তবে এটা ঠিক, তারা একটা কঠিন সময় পার করছে। বিশেষ করে গত কয়েকদিনের ঘটনায় অনেকেই হতাশ হয়ে যেতে পারেন। তবে হতাশ না হয়ে সামনের দিনের জন্যে অপেক্ষা ছাড়া কেনো গতি নাই। আমাদের কাছে ইভ্যালি তিন মাস সময় চেয়েছে। এ সময় আগামী মাসের (অক্টোবর) ২৬ তারিখে শেষ হবে। এর পরে আমরা ইভ্যালি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

ব্যবসা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সময় দেওয়া দরকার : বাংলাদেশ ই-কমার্স মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন
ইভ্যালির জন্য সময় আবেদন করেছে বাংলাদেশ ই-কমার্স মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বেকমা)। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ব্যবসাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ইভ্যালিকে সময় দেওয়া দরকার। রাসেল ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর র‍্যাব অভিযোগ করেছে, তাদের পরিকল্পনা ছিল বিদেশি কোন ইনভেস্টরের কাছে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া। এইটা তো কোনো অভিযোগ হইতে পারে না। বিদেশি কোম্পানির কাছে শেয়ার বিক্রি করা কোনো অপরাধ না।

এছাড়াও তারা বলেছে, শেয়ার বাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল ইভ্যালির। এইটাও অপরাধ না। এইটাই ব্যবসার নিয়ম। এটাও কোনো অভিযোগ হতে পারে না। যে কোনো প্রতিষ্ঠানই বাণিজ্যিকভাবে আর লাভ করতে না পারলে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে, এটা প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রেই থাকে। এটা লিগ্যাল সিস্টেম, ক্রাইম না। যেহেতু ইভ্যালির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি, তাই তাদের সময় দেওয়া উচিৎ। ব্যবসায়ের সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

রাসেল দম্পতির মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর
কাউকে জেলে পাঠা‌লে ই-কমার্স গ্রাহকদের কোনো উপকার নেই : বাণিজ্যমন্ত্রী
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলন কক্ষে ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলে তো কোনো লাভ নেই। সে জেল খে‌টেই শেষ, এতে গ্রাহকদের কো‌নো উপকার হ‌বে না। ই-কমার্সের সার্বিক বিষয়ে মন্ত্রণালয় পজিটিভলি চেষ্টা করছে, কিছু একটা করা যায় কী না।

জেলখানায় নেওয়া সমাধান নয় জা‌নি‌য়ে বাণিজ্যমন্ত্রী ব‌লেন, আমরা সার্বিক বিষয়গুলো অবজারভেশন করছি। আমরাসহ চার মন্ত্রণালয় (অর্থ, বা‌ণিজ্য, আইন ও স্বরাষ্ট্র) বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। তাদের অবস্থান নির্ণয় করা হচ্ছে, কোনো উন্নতি করা যায় কিনা সে বিষয়ে দেখা হচ্ছে।

আদালতে ইভ্যালির রাসেল ও শামীমা ইভ্যালির মামলার বর্তমান অবস্থা
গুলশান থানায় ৩ দিনের রিমান্ড শেষে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে মঙ্গলবার আদালতে নেওয়া হয়। এসময় রাসেলকে আরেকটি মামলায় ১ দিনের রিমান্ডে নেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তার স্ত্রীকে পাঠানো হয় কারাগারে।

গুলশানের মামলার রিমান্ডে রাসেল পুলিশকে জানায়, মার্চেন্ট ও গ্রাহকরা সব মিলে ৯০০ কোটি টাকার মতো পাবে ইভ্যালি থেকে। তিনি নতুন কৌশলে ব্যবসা করে অথবা বিনিয়োগকারী খুঁজে তাদের টাকা পরিশোধের চেষ্টা করবেন।

ধানমন্ডির অর্থ আত্মসাতের মামলার রিমান্ড নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রাপ্ত তথ্যগুলো আদালতে জানানো হবে।’

ইভ্যালি দম্পতির মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন রাসেল দম্পতির বিরুদ্ধে আরেক মামলা
এদিকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৩ মামলার রেশ কাটতে না কাটতে রাসেল দম্পতির বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট( সিএমএম) আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে মুজাহিদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি প্রতারণার মামলাটি দায়ের করে। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ধানমন্ডি থানাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি হওয়ার পর বিকেলেই রাসেল ও তার স্ত্রীকে আটক করে র‌্যাব। পরে গুলশান থানার মাধ্যমে ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে পাঠানো হয়।