২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১১:৪২
শিরোনাম:

দারাজে বিক্রি হচ্ছে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও বিকৃত যৌনাচারের ভয়ঙ্কর উপাদান

গেল ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে বন্ধুর পাশবিক নির্যাতনে মৃত্যু হয় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর। নির্যাতনের শিকার হয়ে ব্যাপক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিকৃত যৌনাচারের ভয়ঙ্কর উপাদান ব্যবহার করায় এই পরিণতি হয় বলে খবরে উল্লেখ করা হয়।

চিত্রনায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজকে গেল ৪ আগস্ট রাতে আটক করে র‌্যাব। তার বাসা থেকে মাদকসহ বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহৃত অনেক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। রাজের বাসার ভেতরে একটি গোপন কক্ষের সন্ধান পায় র‌্যাব। সেখানে বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহৃত অনেক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এই কক্ষটিতে পর্নোগ্রাফি তৈরি করা হতো বলেও ধারণা করা হচ্ছে। পর্নোগ্রাফি মামলায় রাজ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এ দুই ঘটনার পর ব্যাপক আলোচনায় আসে বিকৃত যৌনাচার ও পর্নোগ্রাফি তৈরির এসব উপাদান। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সামাজিকমাধ্যম থেকে শুরু করে ই-কমার্স সাইট ও অ্যাপে প্রকাশ্যে এসব উপাদান বিক্রি হলেও এগুলো বন্ধ করা হচ্ছে না।

বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে নামে-বেনামে বিকৃত যৌনাচার ও পর্নোগ্রাফির এসব মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান বিক্রি হচ্ছে। অনলাইন অর্ডার দিলেই বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে এসব মালামাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব উপাদান বিক্রির মাধ্যমে আমাদের তরুণ সমাজকে বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সমাজে মাদক যেভাবে ভয়াল ছোবল দিচ্ছে তেমনি পর্নোগ্রাফির এসব উপাদান বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

বহুজাতিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। বিকৃত যৌনাচার ও পর্নোগ্রাফি তৈরির এসব উপাদান বিক্রি করতে দারাজ মেয়েদেরকে পরিবার থেকে দূরে থাকারও প্ররোচনা দিচ্ছে। পরিবার থেকে দূরে থেকে একাকীত্ব দূর করতে বেশি বেশি যৌনতার আশ্রয় নিতে প্ররোচনা দিয়ে পোস্টারও প্রকাশ করা হয়েছে দারাজে।

দারাজের ওয়েবসাইট ও অ্যাপে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি সেক্স টয় হিসেবে আর কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ভিন্ন নামে পর্নোগ্রাফির উপাদান বিক্রি করছে। তাদের পণ্যের ক্যাটাগরিতে পার্টি অ্যান্ড গেমস ক্রাফট-এ গেলে ‘লাভ সিজন কক….কেল রিং টাইম ডিলে ইরেকশন কক রিং’ নামে একটি বিকৃত যৌনাচার ও পর্নোগ্রাফি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও, ‘লাভ সিজন সিলিকন….রিং টাইম প্রিম্যাচিউর ডিলে কক লক’, ‘কাউনাইন মেল জেনিটাল আর্ট….ওয়েন অনলি রেট্রো জুয়েলারি উইটিং অ্যাপ্রিসিয়েশন’ বা ‘লাভসিজন….ফাস্ট অ্যাডাপটেশন সিলিকন ডিলে লক রিং ফর বেডরুম’সহ নানান নামে এসব উপাদান বিক্রি হচ্ছে।

কিছু ক্ষেত্রে দারাজ কৌশলে নাম পরিবর্তন করে এসব পণ্য বিক্রি করছে। এর মধ্যে রয়েছে, আই ভাইব্রেটর বা নোচ ভাইব্রেটর। অনেক ক্ষেত্রে বাথরুমের বিভিন্ন উপাদান নাম দিয়ে বিক্রি হচ্ছে পর্নোগ্রাফির এসব মালামাল।

দারাজ থেকে এসব পণ্য কিনতে উৎসাহিত করতে মেয়েদের পরিবার থেকেও দূরে থাকার প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। মেয়েদের ব্যাবহারের এমন একটি ভয়ঙ্কর বিকৃত যৌন উপাদানের পোস্টারে দারাজ ইংরেজিতে লিখেছে, ‘Be away from, home, have more sex, less loneliness’। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, ‘পরিবার থেকে দূরে থাকুন, বেশি বেশি যৌনতায় মাতুন, একাকীত্ব দূর করুন।’

এসব বিকৃত পণ্য আমাদের সমাজে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা জানতে চাইলে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে বলেন, এই বিষয়গুলোকে সোশিও-কালচারাল (সামাজিক-সাংস্কৃতিক) প্রেক্ষিতে নিয়ে ভাবতে হবে। শুধু একটা ‘সেক্টর’ থেকে ভাবলে তা ভুল হবে। বর্তমানে আমরা ডিজিটালাইজেশনের নামে প্রগতির অনেক ঊর্ধ্বে উঠে গেছি। পশ্চিমা কালচারের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা বড় বিপদ ডেকে আনছি।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, অবৈধ পণ্য বিক্রি করলে ভোক্তা অধিকার আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। আমরা অভিযোগ পেলেই মহাপরিচালক স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। এখন কেউ ফেসবুকে পেজ খুলে বা ইউটিউবে চ্যানেল খুলে এসব বিক্রি শুরু করলে হুট করে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না। এ জন্য দেশের কোথাও এমন পণ্য বিক্রি হলে আমাদেরকে জানানোর অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে আরটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে দারাজের জনসংযোগ এজেন্সি ফোরথট পিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আপনাদের প্রশ্নগুলো আমাদের ই-মেইলে লিখিত আকারে পাঠান।’ এরপর ই-মেইলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। ফোরথট পিআরের পক্ষ থেকে ই-মেইল রিসিভ করার কথা জানালেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফিরতি কোনো জবাব মেলেনি।