২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:০৭
শিরোনাম:

করোনা টেস্ট নেগেটিভ করার নামে কোটি টাকার প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১৪

বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্ট নেগেটিভ ফলাফল প্রাপ্তির আশ্বাস দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের ১৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় আত্মসাৎকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সিম জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাজধানী ঢাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, করোনাকালীন প্রতারক চক্র বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে সাধারণ জনগণকে ঠঁকিয়েছে এবং ভূক্তভোগীদের করোনার ভুয়া রিপোর্ট ও এসএমএস প্রদান করে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হাসপাতালে নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্ট করানোর আদেশ জারি করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশগামী যাত্রীরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হাসপাতালে নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে করোনা টেস্ট করে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদেশগামী ব্যক্তিদের টার্গেট করে করোনা টেস্টের ভুয়া পজিটিভ রিপোর্ট এর কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছে কয়েকটি চক্র। বেশকিছু ভূক্তভোগী প্রতারক চক্রকে অর্থ প্রদানের পরেও তাদের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরিপ্রেক্ষিতে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতারণার বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত হয়।

সাধারণ বিদেশগামী যাত্রী, বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন অফিস বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের নিকট এ ধরনের প্রতারণা সংক্রান্ত লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দায়ের করেন। এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে র‌্যাব-১১ এর একাধিক আভিযানিক দল প্রথমে কুমিল্লা জেলা কোতয়ালী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. জসিম উদ্দিন (২২) ও মো. সুলতান মিয়াকে (১৯) গ্রেপ্তার করে।

পরবর্তী সময়ে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও রাজধানী ঢাকার সায়দাবাদ, রমনা ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. বেলাল হোসেন (৩১), মো. আবুল হোসেন (২৪), মো. আবদুল নুর (২১), মো. আলফাজ মিয়া (১৯), মো. শামিম (৩২) এবং (৮) মো. আহাম্মদ হোসেনকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোবাইল সিমের জোগানদাতা মো. ইমরান উদ্দিন মিলনকে (১৯) নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি আরও বলেন, পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের অন্যতম হোতা মো. সবুজ মিয়া (২৭), মো. আব্দুর রশিদ (২৮), আব্দুল করিম চৌধুরী (৩২), মো. আঙ্গুর মিয়া (২৫) এবং মো. আলমগীর হোসেনকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে জব্দ করা হয় প্রায় সাত লাখ টাকা, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১২০টি সিমকার্ড, সিম অ্যাক্টিভেট করার একটি ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন, একটি ট্যাব, ৩২টি মোবাইল, একটি পাসপোর্ট, নোটবুক এবং চক্রের সদস্যদের বেতনের হিসাব বিবরণী।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা কেউ প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পার হয়নি। তথাপি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সুকৌশলে শত শত মোবাইল সিম নামে-বেনামে উত্তোলন করে প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণার মাধ্যমে মো. সবুজ মিয়া জানায়, গত ১০ মাসে সে প্রায় হাজারের অধিক বিদেশগামী যাত্রীর নিকট হতে জনপ্রতি ১০-১৫ হাজার করে প্রায় এক কোটি টাকা আয় করেছে এবং ওই টাকা দিয়ে সে তার গ্রামের বাড়িতে একটি অট্টালিকা তৈরি করেছে।

অন্যদিকে কাজী মো. বেলাল হোসেন এই অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৬ শতাধিক বিদেশগামী যাত্রীদের নিকট হতে জনপ্রতি ১০-১৫ হাজার করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয় করে। বাকি সদস্যরা এই প্রতারণার মাধ্যমে প্রতি মাসে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।