র‌্যাগ ডের নামে অশ্লীল নাচ গানে সমালোচনার ঝড়, পাঁচ শিক্ষককে শোকজ

নাটোর নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজে ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্পাসে ডিস্কো জকি (ডিজে) এনে র‌্যাগ ডে উদযাপন করা হয়েছে। তাদের টি শার্টে অনুভূতি ব্যক্ত করার নামে যৌন উত্তেজক অশালীন প্রকাশ অযোগ্য নানা শব্দ লেখা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগ ডে’র নামে ডিজে পার্টি, উদ্দাম নৃত্য, বুলিং, অশ্লীলতা ও নগ্নতাসহ সব অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

এদিকে এন এস কলেজের এই আয়োজনে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাদের সহযোগিতা করেছেন। সপ্তাহ জুড়ে সমালোচনার জের ধরে বৃহস্পতিবার কলেজের ৫ জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। অপরদিকে, জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ‘স্বপ্নচারী-২০২২’ শিরোনামে বিদায় অনুষ্ঠানের নামে এই আয়োজন করা হয়। এই কলেজ থেকে এবার হাজারো উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিবে। এদের মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী র‌্যাগ ডের পরিকল্পনা করে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগকে অবহিত করে তারা অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করে ও মাথাপিছু চাঁদা সংগ্রহ করে। কলেজের কয়েকজন তরুণ শিক্ষক এতে সহযোগিতা করলেও মেধাবী শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়নি। একজন নারী ডিস্কো জকিকে (ডিজে) বগুড়া থেকে ভাড়া করে আনা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজ চত্বরের মুক্তমঞ্চে এই পার্টি চলে। আয়োজক প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের শতাধিক বহিরাগত বন্ধু অংশ নেয়।

এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মিনারুল মহসিন জানান, আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগ ডে’র নামে যে অপসংস্কৃতি ও বেহায়াপনার ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে তার তীব্র নিন্দা সহ প্রতিবাদ জানাই। আয়োজকদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাই।

কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বুলবুল আহমেদ জানান, পরীক্ষার্থীর নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে মেয়ের কর্মকাণ্ড দেখে হতবাক হয়েছি। কলেজের অধ্যক্ষ এই উচ্ছৃঙ্খলতার অনুমতি দিয়েছেন।

মনিরুজ্জামান ও নাহিদ হোসেন নামের স্থানীয় দুই বাসিন্দা জানান, বিদায় অনুষ্ঠানের নামে ছাত্র-ছাত্রী পরস্পর নিজেদের পরিহিত টি শার্টে প্রকাশ অযোগ্য অশ্লীল লেখালেখি, ভাড়া করে আনা ডিজের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে উদ্দাম নাচ কখনোই সভ্যতার অংশ হতে পারে না। এ নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করায় কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য ও হুমকির শিকার হয়েছি। কেউ কেউ নিজের প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করারও হুমকি দিয়েছে। ইতোমধ্যে অবশ্য কাউসার হোসেন নামে একজন শিক্ষার্থী নিজেদের আচরণের জন্য ফেসবুকে ক্ষমা চেয়েছেন।

নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ বলেন, কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত রাজীব র‌্যাগ ডে উদযাপনের অনুমতি দিতে অধ্যক্ষকে চাপ প্রয়োগ করেন। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করায় অধ্যক্ষ অনুমতি ও প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দিতে বাধ্য হন। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সমালোচনার সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শোকের মাস শেষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।তবে অনেক চেষ্টা করেও কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত রাজীবের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দিঘাপতিয়া এম কে কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদায় অনুষ্ঠানের র‌্যাগ ডে ও ডিজে পার্টির এই আয়োজন কলেজটির অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বিনয়ী বিদায়ের পরিবর্তে এমন উগ্র আয়োজন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।

আহসান হাবিব নামে এক পরীক্ষার্থী দাবী করেছেন, সমস্ত আয়োজন কলেজ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। তিনি বলেন, সবাই মিলে আনন্দ করা দোষের কিছু না। আরেক ছাত্রী রাজশাহীর একটি কলেজের র‌্যাগ ডে’র ভিডিও শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যদি পাশের শহরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এতো আগাতে পারে তবে আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন?

কলেজের অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম জানান, কিছু শিক্ষার্থী বিদায় অনুষ্ঠান করার আবেদন নিয়ে আসায় তিনি অনুমতি দেন। তবে তাদের তত্ত্বাবধানের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই শিক্ষকরা চরম উদাসীনতার পরিচয় দেয়ায় তাদের শোকজ করা হয়েছে। নারী ডিজে ভাড়া করে এ ধরনের অনুষ্ঠান চলছে জানলে তিনি বন্ধ করে দিতেন।