২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১১:০৮
শিরোনাম:

গজারিয়ায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি, এ এস আই ক্লোজ—

নেয়ামুল হক গজারিয়া প্রতিনিধি:

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এক দোকান মালিককে তুলে নিয়ে জঙ্গলে আটকে রেখে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে।

খবর পেয়ে এলাকাবাসী ওই এএসআইসহ পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই এ এস আইকে ক্লোজ করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী ওই দোকান মালিকের নাম শাকিল ফরাজী (২৬)। তিনি গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মধ্য বাউশিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী এমদাদুল হক ফরাজীর ছেলে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শাকিল ফরাজী বলেন, মধ্য বাউশিয়া বাসস্ট্যান্ডে তার খাজা আজমেরী ভ্যারাইটিজ স্টোর নামে একটি দোকান আছে। রোববার সন্ধ্যায় তিনি গজারিয়া থানার এএসআই সুমনের মাধ্যমে জানতে পারেন তার নামে নাকি নারায়ণগঞ্জে বন্দর থানায় একটি মাদক মামলা হয়েছে। বিষয়টির প্রতিবাদ করে সঙ্গে সঙ্গে তিনি গত কয়েক মাসের ভেতরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় যাননি বলে জানান। এ সম্পর্কিত কাগজপত্র দেখতে চাইলে অপারগতা পোষণ করেন এএসআই সুমন।

এদিকে সোমবার সকাল ৯টার দিকে একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারে শাকিল ফরাজীকে দোকান থেকে তুলে নেন এএসআই সুমন। এ সময় গাড়িতে তারা দুজন ছাড়াও টিশার্ট পরিহিত এসআই পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি, কনস্টেবল রফিকুল ও গাড়ির চালক ছিলেন। চালক গাড়িটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন চর বাউশিয়া এলাকার এক নির্জন বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েই একটি পিস্তল দেখিয়ে তাকে দুই লাখ টাকা দিতে বলেন এএসআই সুমন। তার দাবিকৃত টাকা না দিলে মাদক মামলার আসামি হিসেবে তাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি।

এ সময় শাকিল ফরাজী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করে তাকে হ্যান্ডকাপ পরানোর চেষ্টা করা হয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন এগিয়ে আসলে তারা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করেন।

ভুক্তভোগী শাকিলের মা রোকসানা বেগম বলেন, সকাল ৯টার দিকে মাইক্রোবাসে পুলিশ শাকিলকে তুলে নেওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। দীর্ঘ ২-৩ ঘণ্টায় গজারিয়া থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা শাকিলের খোঁজ করেন। পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন একটি জঙ্গলের ভেতরে শাকিল আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় সেখান থেকে পুলিশের হাত থেকে শাকিলকে উদ্ধার করে তারা নিয়ে আসেন।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন জানান, তার এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় কর্মরত। সেখানে শাকিলের নামে একটি মাদক মামলা হয়েছে। সেই বন্ধু আজ গজারিয়া থানায় আসে এবং বিষয়টি নিয়ে তারা নিরিবিলি কথা বলার জন্য শাকিলকে ওই বাগানে নিয়ে যান।

তবে আসামিকে আটক না করে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে নিরিবিলি জায়গাতে কেন নিয়ে যেতে হবে- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি এএসআই সুমন।

বন্দর থানার এসআই তার বন্ধুর নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তিনি অপারগতা পোষণ করে অন্য কাজে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন বলেন, এরকম একটা কথা আমিও শুনেছি। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে এএসআই সুমনকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।