৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১:২১
শিরোনাম:

ক্ষমতায় থাকতে আইএমএফের শর্তে সারের দাম বাড়িয়েছে সরকার: মির্জা ফখরুল

দলের গুম হওয়া নেতাদের স্বজনদের হাতে ঈদ উপহারসামগ্রী তুলে দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ক্ষমতায় টিকে থাকতে আইএমএফের শর্ত মানতে সরকার সারের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত, গুম ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের গুম হওয়া নেতা নুরুল আলম নুরু, নুরুজ্জামান জনি, মাহমুদুর রহমান বাপ্পী, পারভেজ রেজা, তরিকুল ইসলাম তারা, মো. সোহেল, মফিজুল ইসলাম রাশেদ, জাকির হোসেন, জাকির হোসেন মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কাওসার, জাসাসের আমিরুল ইসলাম মিন্টুর পরিবারের সদস্যদের কাছে তারেকের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে একদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে এবং সেই বাড়ানোর পরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আবার কৃষকদের সারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, কৃষকদের কষ্ট হবে, কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে তাকে এটা মেনে নিতে হবে।’

প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোন উন্নয়ন, কার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন হচ্ছে শাসকগোষ্ঠির নিজেদের উন্নয়ন। বাংলাদেশে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। একদিকে, বিশাল বিশাল অংকের (টাকা) মালিক, তারা বাড়ি-গাড়ি তাদের সমস্ত বিলাস-বৈভব নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট করে তারা বিদেশে পাচার করছে এবং বাড়ি-ঘর কিনছে, থাকছে। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষ তারা দুই বেলা দুই মুঠো খাওয়ার জন্যে তাদেরকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে। তাও সে পুরোপুরি পাচ্ছে না। কারণ জিনিসপত্রের দাম তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে।’

গুমের শিকার সোহেলের মেয়ে সাদিকা সরকার সাফার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল, ‘সাফার যে কথা, তারপরে আমাদের কথা বলার অবকাশ থাকে না। সাফার একটি ছবি আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছবির মধ্যদিয়ে পুরো যে বেদনা এবং সারাদেশের মানুষের যে আন্দোলন, একইভাবে ফ্যাসিবাদী এই সরকারের নির্যাতন সমোস্ত চিত্র সেখানে ফুটে উঠেছে। আজকে শুধু সাফা নয়, এখানে আরও ১১ জন আছে, সারাদেশে আমার মনে হয় কমপক্ষে সাত শ’ ওপরে আছে, যারা গুম হয়ে গেছেন, হাজারের ওপরে গণতান্ত্রিক কর্মী খুন হয়ে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ মাস ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুকে কারাগারের গেট থেকে বারবার করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মোছাব্বিরকে জেলগেট থেকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন অপুকে গত তিনদিন আগে গুম করা হয়েছে, তার কোনো সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’

অনুষ্ঠানে গুম-খুন হওয়াদের স্বজনদের বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকেই বলেছেন ১০ বছর, ১১ বছর তারা তাদের পিতা, ভাইকে দেখতে পারেনি।’ বিএনপি গুম খুন পরিবারের পাশে আছে জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর চেষ্টা করি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাদেরকে এই কথাটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, আমরা তাদের ভুলি যাইনি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি। যদিও এখানে উপহারের ব্যাপারটা একেবারেই গৌণ।’

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমনের পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, ছাত্রদলের গুম হওয়া নেতা মাহমুদুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর ও সোহেলের মেয়ে সাদিকা সরকার সাফা।

অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য শাম্মী আখতার প্রমুখ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।