৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:৫৯
শিরোনাম:

জাপা নেতা শিকদার আনিসুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এক নারীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা – ১৭ আসনের জাপার জিএম কাদেরপন্থি হিসেবে মনোনয়ন জমা দেয়া শিকদার আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক নারী। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই নারী গত ২৩ মে রাজধানীর গুলশান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে শিকদার আনিসুর রহমানের নাম উল্লেখ না থাকলেও ওই নারী অভিযোগ চিনতে না পারা অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন এই শিকদার আনিস।

গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এ অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি তিনি গুলশান থানাসহ বিভাগের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছেন। পুলিশ ভুক্তভোগীর অভিযোগটি এজাহার হিসেবে এখনো গ্রহণ করেনি। তবে তার লিখিত অভিযোগটির সত্যতার বিষয়ে তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার শহিদুল্লাহ বলেন, ওই নারীর অভিযোগটি আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে তদন্ত করছি। তার সকল বক্তব্যই আমরা শুনেছি। তদন্তাধীন বিষয় হওয়ায় এখন কিছু বলা যাচ্ছেনা। লিখিত অভিযোগে ওই নারী বলেন, গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে গুলশাস্থ বাড়ী-১০, দূতাভাস রোড, বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের বাসিন্দা বিদিশা সিদ্দিকা এর বাসায় ও তার ব্যাক্তিগত কাজের সহযোগিতা করার জন্য দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে তিনি যান। এজন্য তাকে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। এরপর নির্যাতিতা নারী আস্তে আস্তে বুঝতে পারেন যে,দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে রাত ৮ টা থেকে ৯টার পরে বিভিন্ন অজ্ঞাত পুরুষের সমাগম হয়।

বিদিশা সিদ্দিকা, জনৈক অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন ব্যক্তি সহ বিভিন্ন লোকজন নিয়ে পার্টি করতেন । আর সেখানে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো হতো। এ বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে যান। একপর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিদিশা সিদ্দিকা তাকে বলেন, তার সহযোগি বাসায় সন্ধা ৭ টার দিকে আসবে। এরপর ঠিক সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তি সেখানে আসেন। তখন বিদিশা সিদ্দিকার হুকুমে সেই ব্যক্তি বাসার রুমের সকল সিসি ক্যামেরার সংযোগ খুলে ফেলেন। পরে অজ্ঞাতনামা আরো ২জন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন। এরপর তারা জোরপূর্বক ওই নারীর গায়ে হাত দেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করেন। এতে তার সহযোগি ব্যক্তি ওই নারীকে চড় থাপ্পড় মারতে থাকেন এবং টেনে হিচড়ে বেডরুমের দিকে নিয়ে যায়। পরে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রথমে মনজুর মোরশেদ নামের এক ব্যক্তি তাকে বিবস্ত্র করে জোর পূর্বক নির্যাতন করে। এরপর অজ্ঞাতনামা অপর দুই ব্যক্তিও তাকে জোর পূর্বক সংঘবদ্ধভাবে নির্যাতন করে। এসময় পাশে দাড়িয়ে থাকা বিদিশা সিদ্দিকা তাকে নির্যাতনের পুরো ভিডিওটি ধারন করেন। একপর্যায়ে তারা ওই নারীর মুখ বন্ধ করে রাখতে বলে এবং তারা যা বলবে তাই করতে বলা হয়। এরপর ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়।

নির্যাতিত নারীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ভয় পেয়ে তার বাসায় চলে আসেন এবং তিনি বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেন। পরে গত ২৪ মার্চ আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে মনজুর মোরশেদ ওই নারীর টিকাটুলিস্থ বাসায় গিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় বিদিশা সিদ্দিকা তার কাছে জানতে চান তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে কেন। এসময় তার হাতের মোবাইল ফোন থেকে ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও দেখানো হয়। আর তাকে জানানো হয় যে, ভিডিওটি তার স্বামীকে দেখিয়ে ৩ সন্তান সহ সংসার ভেঙ্গে দিবে। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল করার হুমকি দেয়। এসময় পুনরায় মনজুর মোরশেদ ওই নারীকে আগের সেই রুমে নিয়ে তাকে পুনরায় জোর পূর্বক নির্যাতন করা হয়। আর বিদিশা সিদ্দিক অপর অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তিকে ফোন করে ডেকে আনেন। তারাও সেখানে উপস্থিত হয়ে পুনরায় ওই নারীকে নির্যাতন করেন। নির্যাতন শেষে তাকে তাদের কথামত চলতে হবে এবং হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। পরবর্তীতে তিনি বাসায় এসে তার স্বামী ও পরিবারকে ঘটনাটি জানান। পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেন।
এদিকে থানায় অভিযোগের পর বিদ্দিশা সিদ্দিকা ও মনজুর মোর্শেদের ভয়ে তিনি ও তার স্বামী সহ বাসা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওই নারী অভিযোগ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিকদার আনিসুর রহমানের ছবি দেখে তিনি চিনতে পেরেছেন। এ কারণে তিনি এ বিষয়টি পুলিশের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন যে কয়জন তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে তার মধ্যে আনিসও ছিলো। ওই সময় তার নাম না জানার কারণে তিনি এজাহারে উল্লেখ করতে পারেননি। এখন যখন তার ছবি দেখেছেন তখন তিনি চিনতে পেরেছেন। অভিযোগের বিষয়ে শিকদার আনিসুর রহমান বলেন, ওই বাসাতে তার যাতায়াত ছিল। তবে এ ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। ট্রাষ্ট নিয়ে একটা ঝামেলা চলছে। এ কারণে কারো সঙ্গে বিরোধ হলে বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অভিযোগ আনা হচ্ছে।