২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:৩১
শিরোনাম:

কাঁচা মরিচের কি দোষ ?

সুভাষ দাশগুপ্ত: হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা হয়েছে এবং জানার উপায় নেই এর দাম আগামী কাল কত তে যেতে পারে। দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩ লক্ষ টন কাঁচা মরিচ উৎপাদিত হয় বলে বলা হয় সরকারী পর্যায়ে। তবে অনেকের ধারণা এত উৎপাদন হয় না। তারপর ও, এক দিকে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ২০ লক্ষ, অন্য দিকে উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্হবিরতা দেখা দিয়েছে। তাই ঘাটতি হওয়া ত স্বাভাবিক ব্যাপার।

অদ্য (রোববার), ব্যাংককে খুচরা বাজারে ১ কেজি কাঁচা মরিচের দাম বাংলাদেশ টাকায় সর্বোচ্চ ১০০ এবং সর্বনিম্ন ৪০ টাকা।

বাংলাদেশে দাম বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে গত এপ্রিল- মে মাসে তীব্র তাপ প্রবাহ থাকায় মরিচের ফুল আশা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্হ হয়। এর জন্য উৎপাদন কম হয়েছে। বিষয়টা হচ্ছে, তখন থেকে যদি প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা যেত, তবে আজকে এই অবস্হার সৃষ্টি হয়তবা হতো না। অন্যদিকে, গবেষণা ও সম্প্রসারণ থেকে, এ ব্যাপারে সরকারকে সময়মত অভিহিত করা হয়েছিল বলে মনে হয় না। মনে রাখতে হবে এখনও কিছু কিছু এলাকা আছে যেখানে পরিবারের একবেলা খাওয়ার ম্যানু হচ্ছে পান্তা ভাত, নুন ও কাঁচা মরিচ।

আমদানির ক্ষেত্রে ঈদের ছুটি, বন্দর বন্ধ, অথবা বিদেশী মুদ্রার সংকটকে কারণ হিসেবে দেখানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। বন্ধের সময় ত মানুষ না খেয়ে থাকতে পারে না।

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে আমাদের দেশে এধরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত শুধু দেখাই দিবে না বরং ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৫০ এর ও অধিক ফসলের চাষ হয় এবং শুধু একক কোন ফসল নয়, একই সাথে অনেক গুলি ফসল এর স্বীকার হতে পারে। সেক্ষেত্রে, অবস্হা আরও ভয়াবহ হতে পারে।

উচ্চ তাপ প্রবাহ যদি কারণ হয় তবে আমাদের কৃষক জানেনা উচ্চ তাপ সহিন্ষু মরিচের জাত আদৌ বাজারে আছে কিনা? তাই, তারা আগামী বছর কি করবে? এর কোন সমাধান এদের কাছে নেই বললেই চলে।

এরকম বাস্তবতা থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথ হচ্ছে গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং মন্ত্রনালয় মিলিতভাবে সময় উপযোগী ও কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা এবং তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া।এ ধরণের ব্যাবস্থা সব ফসলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সমস্যা শুধু আমদানি করে সমাধান করা যাবে না।

অন্যান্য পথও খুঁজে দেখতে হবে। আজ যে মরিচের কম উৎপাদনের জন্য এর দাম বেড়েছে এবং এর ওপর ভিত্তি করে সরকার যে মরিচ আমদানির ব্যাবস্থা নিয়েছে তা আমাদের কৃষকদের দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে গবেবষণা এবং সম্প্রসারণ এখনও অনেক পিছিয়ে। জয়তু কৃষক।লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র টেকনিকাল অফিসার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা