২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৬:৩৯
শিরোনাম:

২৮শে অক্টোবর কি ঘটতে পারে?

এটা পরিস্কার যে বিএনপি গত ১০ই ডিসেম্বর ২০২২ সালে এক দফা দাবী আদায়ের প্লান নিয়ে নয়া পল্টনে সমাবেশ করার চেষ্টা করেছিল, তা বাস্তবায়ন দুরের কথা, নয়া পল্টনে সমাবেশ-ই করতে পারেনি। প্লানটা ছিল ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনার আদলে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার। তবে, ১০ই ডিসেম্বরের বিএনপি র প্লান ছিল ৫ই মে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের প্লানের উন্নত সংস্করণ। কারণ বিএনপি মনে করেছিল সরকার যদি সভা পন্ড করে দেয়, তখন অতি উৎসাহী তথাকথিত বিএনপির বিপ্লবীরা তাদের নয়া পল্টনের অফিসের ভিতরে আশ্রয় নিয়ে প্রয়োজনে সশ্রস্ত্র প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে, যেটা শাপলা চত্বরের বেলায় হয় নি।

এখন দেখার বিষয়, বিএনপি ১০ই ডিসেম্বরের ঘটনার কি উন্নত সংস্করণ ২৮শে অক্টোবরে দেখাতে পারে। বিএনপি জোড় গলাতেই বলছে, সরকারের পতন ছাড়া মাঠ থেকে কর্মীদের ফেরানোর কোন পথ আর খোলা নেই। এটা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য। এটাকে হাল্কাভাবে নেয়ার কোন অবকাশ নেই। তাদের মতে এই সমস্যার একমাত্র সমাধান সরকারের পদত্যাগ। তাহলে, সরকারের পদত্যাগের লক্ষ্যে, বিএনপি নেতৃত্ব ২৮শে অক্টোবর সেই সব কর্মীদের উদ্দ্যেশ্যে কি বক্তব্য দিতে পারে?
– নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে বলবে।

– যেহেতু নির্বাচনের তারিখ ১৫ই নভেম্বরের আগে ঘোষণা করার সম্ভাবনা নেই, তাই কর্মীদের মনোবল ঠিক রাখার জন্য গতানুগতিক কর্মসূচী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা অবধি চলতে থাকবে।
– যেহেতু বিএনপির নেতৃত্ব মনে করছে কর্মীদেরকে মাঠ থেকে ফেরানো যাবে না এবং অন্যদিকে কর্মীদেরও ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা শেষ পর্যায়ে, তাই অতি উৎসাহী কিছু নেতাও কর্মী মিটিংএর সময় অথবা শেষ হবার সাথে সাথে ইচ্ছে করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে সহিংস পথে গন্ডগোল সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাতে পারে। উদ্দ্যেশ্য, যাতে করে সহিংস আন্দোলন সাড়া দেশে ছডিয়ে দিতে পারে।

সবশেষে বলতে চাই, তৃতীয় পথটি বেছে নিলে ,হয়তবা আজকের বিএনপির অবস্হা ১৯৭৪ সালের জাসদের মত হতে পারে। সেই সময় জাসদের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরূদ্ধে হঠকারী বক্তৃতা দিয়ে সাধারণ কর্মীদের মাঠে নামিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত যখন বঙ্গবন্ধু সরকারের পতন ঘটানো যাচ্ছিল না এবং কর্মীদেরও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পরার উপক্রম, তখন জাসদের পক্ষ থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলির বাসভবণ ও ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও এর মত ব্যর্থ রাজনৈতিক কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে জাসদের রাজনীতির অবসান ঘটায়।

তাই আশা করব বিএনপি কর্মীদের মাঠ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সে রখম কোন আত্মঘাতি কর্মসূচী দেবে না, যার মধ্যদিয়ে বিএনপির পরিণতি আজকের জাসদের মত হতে পারে।
তবে সরকার যদি সেই ১০ই ডিসেম্বরের মত নয়া পল্টনের পরিবর্তে অন্য জায়গায় সমাবেশ করতে বলে সেটা বিএনপির জন্য ভাল হবে।

লেখক: প্রাক্তন সিনিয়র টেকনিকাল অফিসার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা