২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:৪০
শিরোনাম:

১০ দফা দাবি মানার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অযৌক্তিক: প্রধানমন্ত্রী

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ার পরও তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সাধারণ ছাত্ররা যারা, তাদের ১০ দফা দাবি মেনে নিয়েছে ভিসি। তারপরও না কি তারা আন্দোলন করবে। কেন করবে, জানি না। এরপর আন্দোলন করার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গত কয়েকদিন আগে বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে। আমরা তো পিছিয়ে থাকিনি। কোন দল করে, সেটা না, খুনিকে খুনি হিসেবে দেখি। অন্যায়কারীকে অন্যায়কারী হিসেবে দেখি। অত্যাচারীকে অত্যাচারী হিসেবে দেখি।

তিনি বলেন,খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে কারও আন্দোলনের অপেক্ষা করিনি, কারও নির্দেশের অপেক্ষা করিনি, সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি যে এদেরকে গ্রেপ্তার করা এবং ভিডিও ফুটেজ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে।

এই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের ‘বিপদে’ পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ভিডিও ফুটেজ যখন সংগ্রহ করছে তখন তারা বাধা দিয়েছিল, কেন বাধা দিয়েছিল, আমি জানি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে পুলিশের আইজিপি ছুটে আসলো.. কী করব। বললাম, তারা কী চায়। বলল, কপি চায়। বললাম কপি করে তাদের দিয়ে দাও। তোমরা তাড়াতাড়ি ফুটেজটা নাও, এটা নিলেই তো আমরা আসামি চিহ্নিত করতে পারব, ধরতে পারব, দেখতে পারব এবং সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারব।

সরকার প্রধান বলেন,এই তিন-চার ঘণ্টা সময় যদি নষ্ট না করত, তাহলে তার আগেই হয়ত অনেকে পালাতে পারত না, তারা ধরা পড়তে পারত। এখানে সন্দিহান হওয়ার কিছু ছিল না। বিষয়টা কী আমি জানি না। সন্দিহান, না কি যারা জড়িত তারা বাধা, কোত্থেকে কী করেছে, বুঝতে পারি না। মনে হলো যেন আসামিদের চলে যাওয়ার একটা সুযোগই করে দেওয়ার.. না কি ছিল..ওই আন্দোলন যারা করেছে তারা বলতে পারবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি কিন্তু এক মিনিট দেরি করিনি। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি এই ধরনের অন্যায় করলে কখনও তা মেনে নেওয়া যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো অন্যায়-অবিচার আমরা সহ্য করব না, করি নাই। ভবিষ্যতেও করব না। যারাই করুক, সে যেই অপরাধী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, কথায় কথায় কী? ভোট দিয়ে এই সরকার আসে নাই। জনগণের ভোটেই যদি নির্বাচিত না হতাম তাহলে তো খালেদা জিয়াও ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন ভোট করেছিল। জনগণ ভোট দেয় নাই। সারা দেশে আর্মি নামিয়ে এবং সমস্ত এজেন্সি দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে সে ঘোষণা করলো তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী। সেই তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী কত দিন ক্ষমতায় ছিল? দেড় মাস, দুই মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন পারে নাই? ভোট চুরি করেছিল বলে জনগণ টেনে নামিয়েছিল আন্দোলন করে। তখন আমরা ওই নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। যার জন্য খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। আজকে যদি জনগণ আমাদের ভোট না দিত তাহলে তো বিরোধী দল আন্দোলন করে আমাদের নামাতে পারতো। এই পর্যন্ত তারা তো কিছুই করতে পারলো না।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা করবে কীভাবে? তারা তো নির্বাচনটাকে নিয়েছিল একটা বাণিজ্য হিসেবে। এক সিট বিক্রি করেছে তিনজনের কাছে। তিনজন টাকা খাইছে। কেউ লন্ডনে টাকা নিয়েছে, কেউ নিয়েছে গুলশান অফিস থেকে। কেউ নিয়েছে পল্টন অফিস থেকে।

তিনি বলেন, যাদের ভোট চুরির অভ্যাস। দেখলাম তাদের এক নেতা খুব বক্তৃতা দিচ্ছেন এই সরকার ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই উনি কবে কখন কোন নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী ছিলেন? যখনই অবৈধভাবে যে ক্ষমতায় আসছে সে তার সাথে চলে গেছে মন্ত্রী হতে।

ফেনী নদীর পানি বন্টন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ডার এলাকার নদী মানে নদীতে সমান অংশীদার ভারত এবং বাংলাদেশ। সেখান থেকে তারা একটু খাবার পানি নেবে। সেইটা দিয়েই নাকি নদী বেঁচে দিলাম, নদী বেঁচে দিলাম। খুব আন্দোলন, স্লোগান, বক্তৃতা। একটা মানুষ যদি পান করার জন্য পানি চায়, দুশমন হলেও তো মানুষ তাকে পানি দেয়।

তিনি বলেন, সেটার জন্য এত কান্নাকাটি করার কী আছে? যারা এত কাঁদছেন তাদের জিজ্ঞেস করি, গঙ্গার পানি কোথায় আনবার কথা, খালেদা জিয়া দিল্লি যেয়ে ভুলে গেল। কেউ তো আনলো না! তিস্তায় ব্যারাজ দিল ইন্ডিয়ারে শিক্ষা দেবে। এখন শিক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে পানি ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে। এই নীতি ছিল এরশাদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান গিয়ে ওই হাঁটু গেড়ে বসে থাকলো। তার ক্ষমতাটা নিরঙ্কুশ করতে। কোনো কথা বলতে পারলো না। যা বললো হুবুহু তাই শুনে আসলো। যদি ন্যায্যা অধিকার আদায় করে থাকি, আমি শেখ হাসিনা করেছি।

তিনি বলেন, আমরা গঙ্গার পানির ন্যায্যা হিস্যা এনেছি। আমরা পানির চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের যে বর্ডার স্থল সীমানা চুক্তি আমরা করেছি। সমুদ্র সীমায় আমাদের অধিকার আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। লাভ-লোকসান হিসাব করলে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য জ্ঞানপাপীরা জেনেশুনেই কথা বলে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, হ্যাঁ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কথা বলার অধিকার আছে সবার। বলতে পারে, অন্তত এই সুযোগটা আছে।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার ভূঁইয়া প্রমুখ।