৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১০:৪১
শিরোনাম:

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সিটির তফসিল ঘোষণায় নতুন ৩৬টি ওর্য়াড নিয়ে অস্বস্তিতে ইসি

রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। তপশিল ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। চলতি বছর ১৪ নভেম্বর নির্বাচন উপযোগী হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এদিকে ১৮ নভেম্বর নির্বাচন ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির। ফলে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলেই চলতি মাসের যে কোনো দিন দুই সিটি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে পারে।

তবে, এরইমধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে নতুন করে যুক্ত ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসি। এসব ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলররা এক সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট না করতে কমিশনের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। ফলে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা দিয়েছে কমিশনে।

নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, দুই সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডের সংরক্ষিতসহ ৪৮ জন কাউন্সিলর সময় চেয়ে কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন। তাদের দাবি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য এক বছরও সময় পাননি। অথচ একজন কাউন্সিলর পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। সে ক্ষেত্রে দুই সিটির এসব সম্প্রসারিত ওয়ার্ডে এখন ভোট না দিয়ে তাদেরকে কাজ করার পর্যাপ্ত সময় দিতে দাবি জানান তারা। চলতি বছরের ২৮ ফেরুয়ারির ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনের সঙ্গে প্রথম বারের মতো সম্প্র্রসারিত ৩৬ ওয়ার্ডে ভোট করে ইসি।

এখন ডিসেম্বরের শুরুতে তপশিল দিয়ে জানুয়ারির মাঝামাঝি অথবা শেষে মেয়র পদের সঙ্গে সব ওয়ার্ডে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। এর আগে ২০১৭ সালের ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন করে, যার মধ্য দিয়ে ঢাকার দুই সিটির আয়তন বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়। ঐ বছরের ২৮ জুন ১৮টি করে নতুন ৩৬টি ওয়ার্ড দুই সিটিতে যুক্ত করে ঢাকা সিটির আয়তন বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সঙ্গে যুক্ত নতুন ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছর সময় পাইনি এলাকার কাজ করার জন্য। এ কারণে কমিশনের কাছে আবেদন করেছি আমাদের যেন কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যথা সময়ে ভোট করার জন্য ইসিকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে চিঠি দিয়েছে। আইন অনুযায়ী ইসির ভোট করতে বাধা নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার থেকে চিঠি পাওয়ার ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে কমিশন। গত ১৪ নভেম্বর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন উপযোগী হয়েছে। ১৮ নভেম্বর থেকে নির্বাচন উপযোগী হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটিও। প্রথমত কমিশন চিন্তা করছে ডিসেম্বরের শুরুতে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে ঢাকার দুই সিটির তপশিল ঘোষণার। এজন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় চলছে তফশিল দেওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। তবে, ভোটের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণে সরকারের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছে কমিশন। সরকার জানুয়ারিতে ভোট না চাইলে মার্চ-এপ্রিলে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটিতে একইদিন ভোট করার দ্বিতীয় পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৬, ১৯, ২৩, ২৬ ও ৩০ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ ধরে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৪৫ দিন হাতে রেখে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবে কমিশন। তফশিলের সম্ভাব্য তারিখ বিষয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৬ বা ১৯ জানুয়ারি ভোট হলে তফশিল হবে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। আর ২৩ বা ২৬ জানুয়ারি ভোট হলে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে তপশিল, ৩০ জানুয়ারি ভোট হলে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তফশিল ঘোষণার চিন্তা রয়েছে কমিশনের। বিদ্যমান ভোটার তালিকা দিয়েই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ভোট করা হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুর ইসলাম বলেন, কোনটাতে ভোট করা যাবে কোনটাতে যাবে না এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারা বললে কমিশন তফশিল দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করে। দুই সিটির নির্বাচন আইনি জটিলতা আছে কি না তা আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ না করে বলতে পারব না। নতুন সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলো সিটি করপোরেশনের অংশ। মেয়র নির্বাচনে ঐ ওয়ার্ডগুলো ছাড়া নির্বাচন কীভাবে হবে। পুরোটা একটি পরিষদ। সে ক্ষেত্রে এক সঙ্গে নির্বাচন করতে হবে।

এদিকে ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, এরই মধ্যে দুই সিটির ভোট কেন্দ্রের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দুই সিটিতে সব কেন্দ্র ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন(ইভিএম) ভোট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, দুই সিটিতে প্রায় আড়াই হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষ রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। এজন্য প্রায় ১৫ হাজার ইভিএম প্রয়োজন হবে। ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় মেশিন কমিশনের সংগ্রহে রয়েছে বলে দাবি করেন।