৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১১:১৯
শিরোনাম:

ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে ১৩শত বছর পূর্বের কূপে’র সন্ধান

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে এবার প্রতœতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেল ১৩ শ বছর আগের কুপসহ আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন। সেই সঙ্গে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয়াব্দ থেকে শুরু করে মুসলিম শাসনামলের সমৃদ্ধ প্রতœসামগ্রীও পাওয়া গেছে এবারের খননে। মহাস্থানগড় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন করা হয়েছে। খননের বিভিন্ন পর্যায়ে এখানে বেরিয়ে
এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতœ নিদর্শন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খনন কাজ পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নেও প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরও খনন পরিচালনা করছে। গত ৮ নভেম্বর থেকে গড়ের বৈরাগীর ভিটার ৫টি স্থানে শুরু হয় খনন কাজ। এর মধ্যে ফ্রান্স দল ৩টি এবং প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর দুটি স্থানে খনন কাজ পরিচালনা করে। বৈরাগীর ভিটায় ২০১৭ সালে খননের পর প্রায় এক হাজার ৩০০ বছর আগে নির্মিত তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরের নিদর্শন মেলে। এবার ওই খনন স্থানের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে খনন করা হয়।

খননকালে যেসব প্রতœ নিদর্শন মিলেছে তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে বৈরাগীর ভিটার এই জায়গাটি কোন বাণিজ্যিক কেন্দ্র অথবা খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র ছিল। কারণ খননকালে পাশাপাশি এই ৫টি জায়গায় মোট ৮টি কূপের সন্ধান মিলেছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে বেশ কিছু মৃৎ পাত্র, মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ, মাটির বিশালাকায় একটি ডাবর (মটকা)। খননস্থলে প্রাপ্ত স্থাপত্য কাঠামো এবং উত্তরাঞ্চলীয় উজ্জ্বল চকচকে কালো মৃৎপাত্র (এনবিপিডাব্লিউ) দেখে খনন সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এসব খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয়াব্দ অর্থাৎ মৌর্য আমলের। সেই হিসেবে খনন থেকে প্রাপ্ত ও উন্মোচিত প্রতœসামগ্রী প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন। যৌথ খননে ফ্রান্সের কলিন লেফ্রাংকের নেতৃত্বে অংশ নেন এলবো ফ্রাংকোয়িস ও আতোয়ান। অন্যদিকে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ডঃ নাহিদ সুলতানার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলে ছিলেন প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান, শাহজাদপুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মোহাম্মদ যায়েদ, মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা, সিনিয়র ড্রাফসম্যান আফজাল হোসেন, আলোকচিত্রী আবুল কালাম আজাদ ও সার্ভেয়ার মুর্শিদ কামাল ভূঁইয়া।

খনন দলের সদস্য মোহাম্মদ যায়েদ জানান, এবার যেসব কূপের সন্ধান মিলেছে তার মধ্যে একটি কূপ একেবারেই ব্যতিক্রম। ইতিপূর্বে যত খনন পরিচালিত হয়েছে সেসব খননে কোথাও ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপের সন্ধান মেলেনি। কিন্তু এবারই প্রথম তেমন একটি কূপের সন্ধান মিলেছে বৈরাগীর ভিটায়। এই কূপের প্রায় ৬ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে ৪৬ সারি ইটের গাঁথুনি উন্মোচন করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য ৭টি পাতকূপ পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপটি সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দী অর্থাৎ পাল আমলের। অন্যান্য কূপও
সমসাময়িক সময়ের। সেই হিসেবে প্রায় ১৩০০ বছর আগে এই অঞ্চলে ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপ থেকে মানুষ পানি সংগ্রহ করেছে। মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা এ প্রতিবেদক-কে বলেন, মহাস্থানগড়ের প্রাচীনত্ব বিশ্ব স্বীকৃত। সেই স্বীকৃতির নিদর্শনই প্রতি বছরের খননকাজে উন্মোচিত হচ্ছে। সেখানে যেসব প্রতœবস্তুর নমুনা মিলেছে তা প্রমাণ করে খ্রিষ্টের জন্মের পূর্বেও এই জনপদ ছিল সমৃদ্ধ। তিনি আরও বলেন, এবার খননে সেখানে পোড়ামাটির গুটিকা, মৃৎপাত্র, নকশা করা ইটসহ আরও অন্যান্য নিদর্শন মিলেছে। খনন কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে খননস্থলগুলো সংরক্ষণের জন্য মাটি ভরাট করে রাখা হবে।