৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১২:১৭
শিরোনাম:

নতুন উপসর্গ, স্ট্রোকও হতে পারে করোনায়

করোনা আঘাত হানতে পারে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রেও। যার ফলে, স্বাদ-গন্ধ ভুলতে পারেন মানুষ। এমনই জানিয়েছির আইসিএমআরের সাম্প্রতিক গাইডলাইন। কিন্তু স্নায়ুতন্ত্রে করোনার প্রভাব শুধু এটুকুই নয়, বলছে আমেরিকার নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা। তাঁদের সাবধানবাণী – খিঁচুনি, স্ট্রোকের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে করোনার সংক্রমণের জেরে।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দাবির প্রমাণ পাচ্ছেন শহরের কোভিড চিকিৎসকেরাও। স্ট্রোকে আক্রান্তের চিকিৎসা করতে গিয়ে মিলেছে করোনা সংক্রমণের হদিস।

স্ট্রোকের উপসর্গ নিয়ে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৭ বছরের ভদ্রলোক। উচ্চ রক্তচাপ নেই। জ্বর নেই। নেই অন্য কোনও উপসর্গ। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় করোনার পরীক্ষা করানো হয়। ধরা পড়ে, তিনি করোনায় আক্রান্ত। চিকিৎসকদের সন্দেহ, করোনাভাইরাসের প্রভাবেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।

ইন্ডিয়াটাইমস বলছে, হালকা জ্বর আর তার সঙ্গেই স্ট্রোকের উপসর্গ নিয়ে ভারতের মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আর এক প্রৌঢ়। স্ট্রোকের সঙ্গে করোনাও ধরা পড়ে তাঁর। শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো যায়নি তাঁকে।

শহরের বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, স্রেফ দু’টো রোগ একসঙ্গে দেখা দেওয়া নয়, করোনাভাইরাসের জেরেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তখন স্ট্রোকটাই হয়ে উঠছে করোনার উপসর্গ।

ভারতের ডিসান কোভিড হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগে ৮ জনেরও বেশি এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা করেছেন বিশেষজ্ঞ পারমিতা ত্রিবেদী। পারমিতা বলছেন, ‘রক্তনালিতে থ্রম্বাস (জমাট বাঁধা রক্ত) তৈরি করছে করোনাভাইরাস। মস্তিষ্কে যখন রক্ত জমাট বাঁধছে তখনই স্ট্রোক হচ্ছে। পরে পরীক্ষা করলে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ছে। আন্তর্জাতিক একাধিক পাবলিকেশন ইতিমধ্যেই প্রমাণিত করোনার জেরে স্নায়ুরোগ দেখা দেওয়ার বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতাও তাই বলছে।’

চিকিৎসকেরা বলছেন, এ ধরনের রোগীর বিপদ রয়েছে অন্যত্রও। রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে করোন আবহে দ্রুত অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না।

পারমিতা বলছেন, ‘করোনার সংক্রমণ শরীরে থাকায় অস্ত্রোপচার করেও খুব বেশি লাভ হবে না করোনার কারণে হেমারেজিক স্ট্রেক আক্রান্ত রোগীদের। কারণ, করোনা ফের ক্লট বাঁধাতে পারে।’

এমতাবস্থায় অধিকাংশ রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে করোনার সংক্রমণ এবং স্ট্রোক দুইয়ের প্রভাবে। ভারতের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ বিমানকান্তি রায় বলছেন, ‘করোনাই যে স্ট্রোক ঘটাচ্ছে সেটা প্রমাণের জন্য আরও পরীক্ষা প্রয়োজন। আমরা তথ্য সংগ্রহ করে দেখছি করোনা কতটা স্নায়ুতন্ত্রের উপর আঘাত হানছে।’

আর সেই প্রমাণটা যতক্ষণ না হয়?

আমরি হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা সিনহা বলছেন, ‘অপরিচিত উপসর্গগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে তাই। রোগীর সাধারণ স্ট্রোকও হতে পারে আবার করোনা সংক্রমণের জেরেও স্ট্রোক হতে পারে। দু’ক্ষেত্রেই দ্রুত উপসর্গ দেখে চিকিৎসা শুরু করলে রোগী ভবিষ্যতে সুস্থ জীবন পেতে পারেন।’