৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:১২
শিরোনাম:

কোটি টাকার পাথর বাকীতে নিয়ে প্রতারণা যুবকের

নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড়ঃ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীকে কৌশলে ও প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার পাথর বাকি নিয়ে প্রতারণার করার অভিযোগ উঠেছে মোঃ হাসান নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে ৷ এঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে ৩টি মামলা ও বিভিন্ন অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
অভিযুক্ত মোঃ হাসান জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলাধীন ভজনপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং হাসান ওই এলাকার শামসুল হকের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসান নামে ওই যুবক পূর্বে স্থানীয় বাজারে সবজির ব্যবসা করলেও পরবর্তীতে সে আঁখি এন্ড অপু টেড্রার্স নামে একটি ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেন। পরে তার কাজের অনিয়মের অপরাধে ২০১৭ সালে তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তাকে চাকুরীচ্যুত করেন।
চাকরিচ্যুত হওয়ার কিছুদিন পর হয়ে ওঠেন পাথর ব্যবসায়ী। শুরুতে নগদ টাকায় পাথর ক্রয় করলেও পরে ব্যবসায়ীদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলে বাকীতে পাথর ক্রয় শুরু করেন হাসান। জামানত হিসবে ব্যবসায়ীদের দিতেন নিজের স্বাক্ষরিত বিভিন্ন ব্যাংকের চেক। কিন্তু পাওনাদাররা ব্যাংকে চেক জমা দিলেও একাউন্টে টাকা না থাকায় চেক ডিজঅনার করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এইদিকে পাওনা টাকার জন্য হাসানের কাছে ব্যবসায়ীরা গেলে মিথ্যা আশ্বাস মিলেছে। গত দুই বছর ধরে টাকা দেয়ার কথা বলে সময় ক্ষেপণ করেছেন হাসান।
এদিকে প্রতারক হাসানের বিরুদ্ধে মোফাজ্জল হোসেন ও সোলেমান পাশা, তফিজুল ইসলাম নামে তিন ব্যবসায়ী গত ২০১৮ সালের দিকে পৃথক ভাবে তিনটি মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত দুবছর  পূর্বে হাসান মোটা অংকের টাকায় পাথর ক্রয় করলে টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অজুহাত দেখায় এমনকি ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকার চেক প্রদান করলেও তার ব্যাংক একাউন্টে কোন টাকা নেই। তাছাড়া মামলার পূর্বে পাওনা টাকা উত্তোলনের জন্য হাসানকে আদালতের মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ করলেও আদালতকে অবমাননা করে নোটিশের কোন জবাব বা পাওনা টাকা পরিশোধ করতেও স্বীকার হয়নি। এভাবে একাধিক ব্যবসায়ীর লক্ষ লক্ষ টাকার পাথর নিয়ে এখন সেই পাথরের টাকা পরিশোধ করতে হাসান শুরু করেছে টালবাহানা।
এবিষয়ে কথা হয় বাংলাবান্ধা এলাকার পাথর ব্যাবসায়ী মনিরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, হাসান নামে ওই প্রতারক আমার কাছে গত দুবছর আগে পাথর বাকি নিয়ে টাকা দিচ্ছে না। টাকার জন্য যোগাযোগ করা হলে হাসান দেখাও করে না ফোনও ধরছে না৷ শুধু আমি নই আমার মতো ২০ থেকে ২২ জন ব্যবসায়ীরা কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা পাথর বাকি নিয়ে তাদের পথে বসিয়েছে হাসান নামে ওই প্রতারক।
এবিষয়ে মোফাজ্জল হোসেন নামে আরেক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জানান, হাসান আমার কাছে সাত লক্ষ বিশ হাজার টাকার পাথর  বাকি নিয়ে টাকা দিচ্ছে না। গত দুই বছর ধরে সে আমার পাওনা টাকা না দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছে।  সে আমাকে তার ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দিলে সে চেকের টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গেলে তার একাউন্টেে কোন টাকা নেই বলে  ইসলামী ব্যাংক নিশ্চিত করে । পরে আমি আমার পাওনা টাকা না পাওয়ায় আদালতের গিয়ে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি, মামলটি চলমান রয়েছে।
একই কথা জানান, হাসানের প্রতারণার ফাঁদে পড়া সোলেমান পাশা নামে আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বরিশাল থেকে এসে বাংলাবান্ধায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরুর প্রথম দিকে তার ব্যবসা ভালোই চলছিল। এসময় হাসানের সাথে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক গড়ে ওঠলে হাসান সুযোগের সৎ ব্যবহার করে ১৫ লক্ষ টাকার পাথর বাকি নিয়ে তাকেও ধরিয়ে দেয় ব্যাংকের চেকের পাতা। তিনিও তার পাওনা টাকা না পেয়ে বাধ্য হয়ে আদালতে যেতে বাধ্য হয়। এবিষয়ে সোলেমান পাশার সাথে কথা বললে তিনি জানান,আমার কাছে হাসান পাথর বাকি নিয়ে আমার পাওনা টাকা ২বছর ধরে আটকে রেখেছে। আমি এখন পথে বসেছি, বন্ধ হয়ে গেছে আমার ব্যবসা। আমি আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি, আগামী ৪ অক্টোবর আদালত রায়ের দিন ধার্য করেছেন,আমি আদালতের কাছে আশাবাদী আমার পাওনা টাকা উত্তোলন ও হাসানের উপযুক্ত বিচার করবেন আদালত।
এদিকে হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোঃ হাসান তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমার কাছে কেউ টাকা পাবে না। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময় তিনি ক্যামেরা দেখে দ্রুত পালিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন।
পঞ্চগড় দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর( পিপি) এ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম জানান, হাসান নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। তবে একটি মামলায় আগামী ৪ অক্টোবর রায়ের দিন ধার্য করেছে আদালত৷