৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:২২
শিরোনাম:

বর্ষায় নিকলীর এক একটি গ্রাম যেন একটি দ্বীপ

বাসিরুল ইসলাম অনিক কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :  ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত “দুই বিঘা জমি” কবিতার পংক্তিমালার মতই কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত নিকলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের গ্রামগুলো। তবে বর্ষায় উপজেলার হাওরে এক একটি গ্রাম মনে হয় এক একটি ভাসমান দ্বীপের মতো। সে সময় কোনো অচেনা অজানা মানুষকে বিশ্বাস করানোই যাবে না যে এটা কোনো দ্বীপ নয়, এটি একটি গ্রাম।

এসব গ্রামে বাস করে অসংখ্য মানুষ । ছবির মতো সুন্দর এ গ্রামগুলোতে রয়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। সরেজমিনে নিকলীর হাওর ঘুরে দেখা যায়, হাওরের পানি, হাওরের মাটি যেন প্রকৃতির এক অকৃপণ দান। শুকনা মৌসুমে হাওরের মাটিতে যেমন ফলে সোনালী ধান তেমনি বর্ষায় হাওরের ভাসান পানিতে পাওয়া যায় রুপালী মাছ। তবে বর্তমানে হাওরে মাছের অভাব না থাকলেও ইজারাদারদের কাছে জেলেরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। মাছ ধরতে গেলে ইজারাদাররা জাল কেড়ে নিয়ে যায়। এছাড়া প্রকৃতির বৈরিতা হাওরের মানুষের চোখের নোনা জল ঝরিয়েছে বারবার। উপজেলার মানুষদের বর্ষাকালে চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। নৌকা ছাড়া এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদেরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে হয় নৌকায় চড়ে।

অন্যদিকে বর্ষায় হাওরে একটু বাতাস হলেই সৃষ্টি হয় কক্সবাজারের মতো বড় বড় ঢেউ। সেই ঢেউ উপেক্ষা করে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে দুলতে দুলতে জেলেরা যায় হাওরে মাছ ধরতে। ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বা লঞ্চে চড়ে মাইক বাজিয়ে বর-কনে শুশুর বাড়ি যায় বিয়ে করতে। এসব দৃশ্য যে কোনো মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ না করে পারে না। বর্ষায় টুকিটাকি মাছ ধরা ছাড়া হাওরের মানুষের বাকি সময় বেকার কাটে। কেউ তাস খেলে, কেউ লুডু খেলে আবার কেউ ক্যারাম খেলে সময় কাটান। তাই হাওরের মানুষের কর্মময় বছরের শুরু হয় বর্ষা শেষে কার্তিক মাসে। পুরো শীতের সময় মানুষ থাকে কর্মব্যস্ত। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে থাকে ধান কাটার ধুম। ওই ফসল ঘরে তোলতেই পানি এসে যায়।

এর পর কর্মহীন কৃষকের হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে রিমঝিম বৃপিতনের শব্দ শুনে। তবে প্রায়শই অকাল বন্যার কারণে বছরের একমাত্র বোরো ধানের ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। সদর ইউপি চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়া আহমেদ তুলিপ বলেন, বর্ষায় আমরা পানিতে ভাসি। যখন আফাল (বাতাস) আসে বড় বড় ঢেউ এসে গ্রামে আছড়ে পড়ে। তখন আমাদের গ্রামের মানুষ গ্রাম রক্ষার জন্য সারা রাত পানিতে নেমে থাকে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা আফসিয়া সিরাত জানান, হাওরের গ্রামগুলি অপার সুন্দরের লীলাভূমি। বিছিন্ন গ্রামগুলিকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে পারলে জমি রক্ষা পাবে, আয় বৃদ্ধি পাবে ও সকল নাগরিক সুবিধা পাবে। সবকিছু মিলিয়ে সারা বছরের কর্মসংস্থান হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, নিকলীর হাওরে বর্ষায় জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢেউয়ের তালে তালে জাল পেতে যেভাবে মাছ ধরে তা দেখে ভয় হয়। তবু তারা জীবিকার তাগিদে একাজ চালিয়ে যাচ্ছে।