২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৯:১৬
শিরোনাম:

ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো প্রতীক ধারণ

ডেস্ক রিপোর্ট:  কোথাও থেমে নেই নারীর প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণ, বর্বরতা। শহর কিংবা গ্রাম, সর্বত্র বাড়ছে পাশবিক-নৃংশসতা। সিলেট থেকে বেগমগঞ্জ, উত্তরবঙ্গ থেকে চট্টগ্রাম- যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ‘এখনও চলছে মধ্যযুগের বর্বরতা’। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত লাগাতার বর্বরতার ঘটনাগুলো মানুষের স্বাভাবিক জীবনে এবং সমাজে ফেলেছে নিরাপত্তাহীনতার কালো ছায়া। বাইরে বের হতে এখন নারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত ও আধুনিক বিশ্বে ‘পাশবিকতার ঘোর অন্ধকার’ যেন দানবীয় থাবায় ঘিরে ফেলেছে নারীদের। বাঁচতে পারছে না শিশু, বিধবা, আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী নারীরাও। বার্তা২৪

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে রাতটা পর্যন্ত এ আন্দোলনের ডাক দিলেও সোমবার থেকে চলছে প্রতীকী এ চিহ্ন ধারণ করে প্রতিবাদ। ‘অন্ধকারে ডুবে নারী নির্যাতনের বিচার আলোর আশা’- নতুন এ প্রতিবাদের ভাষা সকাল হতে হতে ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে।

নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান নির্যাতন, ধর্ষণ, বর্বরতার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে চলছে নানা প্রতিবাদ। প্রযুক্তির যুগে ধর্ষণের মতো বিভৎস নির্যাতন বন্ধে নারীরা বেছে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) নারী নির্যাতনের বিচার ও ধর্ষণ বন্ধের দাবিতে শোকের প্রতীক ‘কালো চিহ্ন’ ফেসবুক প্রোফাইলে ধারণ করে চলছে প্রতিবাদ।

সব শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রোফাইলে কালো প্রতীক ধারণ করে #ট্যাগ ব্যবহার করে নারীর ওপর ধর্ষণসহ সব ধরনের নির্যাতনের বিচার দাবি করেছেন।

ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশানের (ইপসা)উপ পরিচালক (সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ) নাসিম বানু শ্যামলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, নারীদেরকে যে অন্ধকারে, নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, আমাদের সমাজ, দেশের হর্তাকর্তা এবং আইন প্রয়োগ কতটা অন্ধকারে আছে এর বিরুদ্ধে আমার প্রতীকী প্রতিবাদ।

নাট্য অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি তার ফেসবুক প্রোফাইলে কালো প্রতীক ধারণ করে পোস্ট করেন, ‘ধর্ষকসহ সকল যৌন নির্যাতনের শাস্তি হোক মৃত্যদণ্ড’।

ওযার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান তার ফেসবুক ওয়ালে কালো প্রতীক ধারণ করেছেন।

বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান। পুরুষদের পাশাপাশি নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী এরাও দেশের নাগরিক। স্বাধীন একটি দেশে দিনের পর দিন এভাবে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়া এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক যাতে অন্যরা এ ধরনের অপরাধ করার আগে বহুবার চিন্তা করে।আর আমাদের প্রতিবাদ জানানোর আর ভাষা নেই। তাই এ প্রতিবাদে সামিল হয়েছি।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সময়ে একের পর এক ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সিলেটে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক তরুণী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরবর্তীতে পুলিশ ধর্ষণে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করেন। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে আসে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় নারী নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা।

সো্শ্যাল মিডিয়ার প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেওয়া প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক মানসুরা হোসাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি কখনোই প্রোফাইল চেঞ্জ করি না, এবার মনে হলো হোক একটা প্রতীকী প্রতিবাদ। তবে শুধু নারী করবে এটা আমার ভালো লাগে নি, অনেক পুরুষ করছেন এটা ভালো লেগেছে। অনেকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন মেয়েরা কেন মুখ ঢাকবে? আমি ব্যাপারটা সেভাবে না দেখে কালো মানে প্রতিবাদ সেভাবে দেখেছি।

জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করে। ঘটনার ৩২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ৪ অক্টোবর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র দেয়া তথ্যমতে, গত চার বছরে প্রায় সাড়ে চার হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হন। চলতি বছর ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-পরিসংখ্যানে ৮৮৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তী সেস্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর নারী নিযাতন ও ধষর্ণের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষণের মোট সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

সোমবার থেকে নোয়াখালীতে গৃহবধূ নির্যাতনসহ সারাদেশের ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনার বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।