৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:১৪
শিরোনাম:

লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান

আব্দুল্লাহ আল মামুন, সৌদিআরব প্রতিনিধি : ৬০হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে আজ সোমবার  পবিত্র হজ পালন করছেন। সৌদিতে অবস্থানরত অভিবাসী বিশ্বের ১৫০টি দেশের হাজিরা আজ আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন।

আজ সূর্যোদয়ের পর ৬০ হাজার হাজী মিনা থেকে রওনা হন আরাফাতের ময়দানের দিকে। ট্রেনে, এবং বাসে  হাজিরা আরাফাতের ময়দানে হাজির হন।হাজারো কণ্ঠে ছিল একটিই ধ্বনি, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’(আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)।

হজের তিন ফরজের মধ্যে ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত না হলে হজ হবে না।পাপমুক্তির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজী) মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করেন। কেউ কেউ যান জাবালে রহমতের কাছে। আবার কেউ কেউ যান মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা শুনতে কিন্তু এবছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে নিদিষ্ট সংখ্যক হাজীদের নিয়ে সুশৃংখল ভাবে সব কিছু তদারকি করা হচ্ছে I

আরাফাতের ময়দানে হাজিরা তাঁবুর ভেতরে ফজরের নামাজ পড়েন। তাঁবুর মধ্যেই নামাজ, বন্দেগি, দোয়া-দরুদ ও কোরআন শরিফ পড়ছেন I করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সকল হাজীদের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে Iসার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে হাজীদের পরিচালিত করা হচ্ছে I

আরাফাত ময়দান মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই ময়দানে অবস্থিত মসজিদটির নাম মসজিদে নামিরাহ। এই মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণকারী হাজিরা জোহরের ওয়াক্তে এক আজান ও দুই ইকামতের সঙ্গে একই সময়ে পরপর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করে থাকেন। নামাজের আগে ইমাম সাহেব খুতবা দেন। নিয়ম হচ্ছে, কেউ মসজিদের জামাতে শামিল হতে না পারলে নিজ নিজ তাঁবুতেই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করবেন। তবে সে ক্ষেত্রে জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে না পড়ে জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আলাদা আলাদাভাবে পড়তে হবে। পরবর্তী কাজ সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেওয়া।

আরাফাত থেকে মুজদালিফা যাওয়ার পথে মাগরিবের নামাজের সময় হলেও নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। মুজদালিফায় পৌঁছার পর মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে পড়তে হয়। মুজদালিফার খোলা প্রান্তরের খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়। কারণ, এই মুজদালিফায় আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) খোলা প্রান্তরের খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান।শয়তানের উদ্দেশ্যে পরপর তিন দিন ছোড়ার জন্য ৭০টি পাথর এখান থেকেই সংগ্রহ করতে হয়।

মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব, ফজরের নামাজ পড়ে দোয়া–দরুদ পড়ে সূর্যোদয়ের কিছু আগে মিনার উদ্দেশে রওনা দেওয়া, পরবর্তী কাজ বড় জামারায় গিয়ে শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ করা। জামারা হলো মিনা ময়দানে অবস্থিত তিনটি স্তম্ভ। এগুলোর নাম জামারাতুল উলা বা ছোট জামারাহ্‌, জামারাতুল উসতা বা মধ্যম জামারাহ্‌ এবং জামারাতুল কুবরা বা বড় জামারাহ্‌।

পাথর নিক্ষেপ–পরবর্তী কাজ হলো কোরবানি করা। হাজিরা কোরবানির টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে আগেই জমা দেওয়ায় কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানে যেতে হবে না। জামারাহ থেকে বেরিয়ে পুরুষ হাজিদের মাথা মুণ্ডন করতে হবে।

১০ থেকে ১২ জিলহজ তাওয়াফে জিয়ারত করা হজের অন্যতম ফরজ কাজ। কাবা শরিফের তাওয়াফ শুরু করতে হয় হাজরে আসওয়াদ থেকে।

মসজিদুল হারামের চত্বরের একপ্রান্ত থেকে একটা পায়ে চলা পথ জামারার দিকে চলে গেছে। রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশই পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা টানেল। এই রাস্তার নাম আল রাহমাহ স্ট্রিট বা সহজে চেনার জন্য পায়ে হাঁটার পথ।যদিও এবছর সকল হাজীগণদের সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বাসের মাধ্যমে পরিবহন সেবা চালু করা হয়েছে I

হাজিরা মিনায় দুদিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ, যেমন: প্রতিদিন জামারায় তিনটি (ছোট, মধ্যম, বড়) শয়তানকে সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। মিনার কাজ শেষে আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফের মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে I

ReplyForward