২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:১১
শিরোনাম:

লোকাল বাসে একজন গায়ে বমি করে দেয়, বাকিরা পকেট কাটে

আলতাফ হোসেন। দিনাজপুর থেকে এসেছিলেন ঢাকার রামপুরায় ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে। বেড়ানোর জন্য রামপুরার বাসা থেকে বেরিয়ে হাতিরঝিল অতিক্রম করে মিরপুরগামী কারওয়ান বাজারের বাসে ওঠেন। জ্যামে ধীরে ধীরে বাস চলছে, সেই সময় পাশের যাত্রী বমি করতে শুরু করেন, কিছুটা বমি করেও দেন। এরপর লোকজন চলে আসে আশপাশে। কিছুক্ষণ পরে আলতফ নামের ওই ব্যক্তি টের পান, তার পকেট কাটা। পকেটে ছয় হাজার টাকা ছিল, সব গায়েব।

এটি কিছুদিন আগের ঘটনা হলেও রাজধানী ঢাকায় গায়ে বমি করে দিয়ে পকেট কাটার হার মারাত্মকভাবে বেড়েছে। কিছুদিন আগে যাত্রাবাড়ী এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটে।

হাসিবুর রহমানের সঙ্গে সোমবার এমন ঘটনা ঘটেছে। হাসিবুর নিজে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে―বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বাসায় ফিরছিলাম। প্যান্টের বাম পকেটে বেশ কিছু টাকা ছিল। রাজধানী বাসে উঠলাম। বসার জায়গা নেই। কুড়িল বিশ্বরোড পার হওয়ার পর দুজন লোক বাস থেকে নেমে গেল। পুরো বাসে অনেক মানুষই দাঁড়ানো ছিল; কিন্তু একজন লোক সেই সিটে না বসে আমাকে সিটে বসতে বলল, যেখানে কিনা অনেক মানুষ দাঁড়ানো ছিল, তারপর সে স্পেসিফিকভাবে আমাকেই বসতে বলল।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদূর যাওয়া পর আমার পাশের সিট ফাঁকা হওয়ায় অন্য একজন সেখানে বসল। আমার কেন যেন সন্দেহ হলো, লোকটি আমাকে ফলো করছে। আমিও সাবধানে আছি, যেহেতু পকেটে টাকা। ইসিবি চত্বরে আসার পর লোকটা হঠাৎ আমার পেছনের সিটে গিয়ে আমার গায়ের ওপর বমি করে দিল। হয়তো কোনোভাবে সে বুঝে গিয়েছিল যে আমি সতর্ক হয়ে গেছি। বমি করার পর বাস থেকে নামার সময় দেখি পকেট কাটা। আলহামদুলিল্লাহ টাকা নিতে পারে নাই।’

হাসিবুর জানালেন, সেখানে সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের পড়াশোনা ও খাবারের খরচের টাকা ছিল।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করছেন, এমন ঘটনায় সতর্কতাই প্রতিকারের একমাত্র উপায়। সোমবার বিকেলে তিনি  ‘এমন ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে আমি শুনেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখেছি। এসব প্রতিকার করতে হলে সবার আগে যখন ঘটনা ঘটনা তখনই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানিয়ে এর ব্যবস্থা নিতে হবে। তারপর ফলাও করে মিডিয়াতে এই দৃষ্টান্ত প্রচার করতে হবে। এতে করে অন্যরা সতর্ক হবে।’

এমন চক্র ঢাকায় এখন বেশ সক্রিয়। তবে চট্টগ্রামে এমন চক্র কাজ করে ব্যাংকে ব্যাংকে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওত পেতে থাকে ব্যাংকে! সপ্তাহে দুই দিন ছুটিও কাটায় তারা! তাদের কর্মকাণ্ড দেখে পুলিশও অবাক। এমন আরো কয়েকটি চক্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বন্দরনগরী বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুধু ব্যাংক গ্রাহকদের টার্গেট করে পিছু নেয় চক্রটি। পরে গায়ের ওপর বমি করে পরিষ্কারের নামে সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নেয় টাকার ব্যাগ।

দুই বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুরে অসুস্থতার ভান করে (বমি করে) সেলিম রেজা নামের এক বাসযাত্রীর কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় লিটন মিয়া (৩৫) নামের এক প্রতারককে আটক করা হয়। সেলিম রাজা এ বিষয়ে শ্রীপুর থানায় মামলাও দায়ের করেছিলেন।