৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:৪২
শিরোনাম:

মালিক তো নিঃস্ব, ঈদে বেতন-বোনাস চাইবো কোন মুখে’

ঈদ ঘিরে প্রতি বছর জমে ওঠে রাজধানীর বঙ্গবাজার। দোকানে নতুন পোশাক তোলেন ব্যবসায়ীরা। কেনাকাটার ব্যস্ততায় দরকার হয় অতিরিক্ত কর্মচারীর। ঈদের এই ব্যস্ততা সামাল দিতে দোকানিরা রাখেন বাড়তি কর্মচারী। আবার এ সময়ে উৎসবে খরচ যোগাতে অনেক তরুণ-যুবকরা বঙ্গবাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ নেন। চাঁদরাত পর্যন্ত চলে কেনাবেচার ব্যস্ততা। ভালো ব্যবসা হলে দোকানিরা কর্মচারীদের বেতনের পাশাপাশি দেন বাড়তি বোনাসও। যাতে তাদের ঈদ আনন্দে বেড়ে যায় বহুগুণ।

তবে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে বঙ্গবাজার। নিঃস্ব হাজারো ব্যবসায়ী। এতে আসন্ন ঈদের আনন্দ দুই সপ্তাহ আগে ফিকে হয়ে গেছে বঙ্গবাজার ঘিরে যাদের রুটি-রুজি, সেসব দোকান কর্মচারীর পরিবারেরও। অধিকাংশ কর্মচারীকে এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি ফিরতে হবে শূন্যহাতে। এমন পরিস্থিতিতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার দোকান কর্মচারীর।

তাদের মতোই একজন আল-আমিন রনি। ঈদ মৌসুম এলে বঙ্গবাজারে বিক্রয়কর্মীর কাজ নেন তিনি। রনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদের আগের এক মাস এ মার্কেটে কাজ নিই। বেতন-বোনাস যা পেতাম, তা দিয়ে নিজের এবং পরিবারের ঈদ খরচ ভালোভাবে হয়ে যেতো। ঢাকা থেকে গ্রামে বাড়ি ফেরার সময় সবার জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে যেতাম। এবার তো সব শেষ। মালিকেরও সব শেষ। এখন কীভাবে যে চলবো, ঈদে পরিবারকে কী খাওয়াবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

মেহেদী হাসান নামে আরেক বিক্রয়কর্মী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সারা বছর কম-বেশি যা কামাই, ঈদে আশা থাকে বেশি টাকা আয় করার। এ টাকা দিয়ে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করি। এবার আর সেটা হবে না। খালি হাতেই ফিরতে হবে। গাড়িভাড়াও ধার-দেনা করে গোছাতে হবে। মালিকের তো সব শেষ। তার কাছে কোন মুখে চাইবো?’

ইমরান গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী ফেরদৌস রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে (বঙ্গবাজারে) মালিকের ৬-৭টা দোকান ছিল। বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেমন কোনো মালামাল রক্ষা করতে পারিনি। এবার মালিকের যে লোকসান হলো, উনার কাছে বেতন-বোনাস কীভাবে চাইবো? গত মাসের বেতনও এখনো পাইনি। পরিবার নিয়ে কীভাবে ঈদ কাটাবো? কিছুই ভারতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক দোকানে ৫-৬ জন করে বিক্রয়কর্মী থাকে। মালিকরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আর এসব কর্মচারীরাও হঠাৎ কাজ হারিয়ে ফেলেছেন। ঈদের সামনে কোথায় কাজ পাবে? ঈদ উৎসবের চেয়ে এখন আমাদের বড় চিন্তা কোথায় কাজ পাবো?’

বিসমিল্লাহ ফ্যাশনের মালিক সুমন দেওয়ান বলেন, ‘মোহাম্মাদীয়া কমপ্লেক্সের সব দোকান পুড়ে শেষ। সবারই ৪০-৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতি হয়েছে। দোকান নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিক্রয়কর্মীদের কিছু দেওয়ার অবস্থাও তো নেই। অনেকের দুই মাসের বেতনও বকেয়া। বোনাসসহ চাঁদরাতে বেতন দেওয়ার কথা ছিল। আগুনে তো সব শেষ। এখন কর্মচারীদের বলেছি বাড়ি চলে যেতে। আবার কিছু করতে পারলে তাদের ডাকবো।’