মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকায় মেঘনা নদী ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ট্রলারে গাদাগাদি করে মুন্সিগঞ্জ শহরে এই খেয়াঘাট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন শিশু, কিশোর-কিশোরী, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ। এতে বিভিন্ন সময় যাত্রীরা নৌ-দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে সর্তক না হলে কিংবা যতদিন মুন্সিগঞ্জ শহর ও চর কিশোরগঞ্জ এলাকা মেঘনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত না হবে ততদিন নৌ-দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ অক্টোবর গজারিয়া ও চর কিশোরগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাডুবির ঘটনায় গজারিয়া উপজেলার দক্ষিণ ফুলদী গ্রামের মফিজ ব্যাপারীর স্ত্রী সুমনা আক্তার (৩৫) মেয়ের জান্নাতুল মাওয়া (৬) কাজী বোরহান উদ্দিনের মেয়ে জান্নাতুল সাবিহা (৮) মফিজ ব্যাপারীর স্ত্রীর ভগ্নিপতি রংপুর জেলার বাসিন্দা সাব্বির (৪০) ও তার ছেলে ইমাদ (৭) একই পরিবারের ছয় জন নিহত হন।এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা নদী পার হতে গিয়ে নৌ-দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অকালে জীবন হারাচ্ছেন নিরীহ জনগণ। জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলাকে পৃথক করেছে মেঘনা নদী। জেলার এ দুটি উপজেলাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলা মিলে গঠিত হয়েছে মুন্সিগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসন ।
অভিযোগ রয়েছে, এসব খেয়াঘাটের অনেক চলাচলরত ট্রলার, নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো চালাচ্ছেন অদক্ষ চালকরা। প্রতিদিনই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেই ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রলার ও নৌকায় মেঘনা নদী পাড়ি দিচ্ছেন হাজার মানুষ। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ছোট আকারের ট্রলারে যেখানে ২০-২৫ জন যাত্রী নেওয়ার কথা সেখানে ৫০-৬০ যাত্রী বোঝাই করে নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ছোট নৌকায় যেখানে ৫-৭ জন নেওয়ার কথা সেখানে ১৫-১৬ জন যাত্রী নিয়ে মেঘনা নদী পারাপার করা হচ্ছে। মেঘনা নদীতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে কার্গো, জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ ও বালুবাহী বাল্কহেডসহ বড় বড় বিভিন্ন ধরনের নৌযান। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা নদীতে অনেক সময় রাতের বেলায়ও চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেডসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান। এ সব নৌযানের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। নৌ-দুর্ঘটনায় আতঙ্ক নিয়েই মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পার হচ্ছেন মেঘনা নদী। খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা মুন্সিগঞ্জ শহরের সরকারী হরেগঙ্গা কলেজ, প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ, সরকারি টেকনিক্যাল এন্ড কলেজ, টিটিসি মুন্সিগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য মেঘনা নদী পার হয়ে এপারে শহরে আসছেন।আবারও ওপারে ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়াও গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জীবিকার তাগিদে শহর এলাকার ট্রলার যুগে মেঘনা নদী পার হয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে যাচ্ছেন। এছাড়াও গজারিয়া উপজেলার অনেক লোক মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার ভেতর দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে আসছেন। এ সময় তাদের নদী পার হওয়ার সময় জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়।
মেঘনা সেতু দ্রুত নির্মাণের দাবি জানিয়ে গজারিয়া উপজেলার কাজিপুরা এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, তেলবাহী কার্গো জাহাজ, বালুবাহী বাল্কহেড সহ বড় বড় নৌ-যান চলাচলের কারণে আতঙ্ক নিয়ে যাত্রীদের ট্রলার দিয়ে নদী পারাপার হতে হয়। এছাড়াও ঘাট গুলোর অনেক ট্রলার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও নৌকার চালকরাও অদক্ষ। যে কারণেই প্রায়ই ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, অনেক সময় গজারিয়া ও চর কিশোরগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় নদী পারাপারের সময় নৌকা বা ট্রলার ডুবে যাত্রীরা হতাহত হচ্ছেন। একই এলাকার রেজাউল বলেন, অনেক সময় দেখা যায় নদী দিয়ে আসা বড় বড় নৌযান বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এ সময়ও ঘটতে পারে নৌ-দুর্ঘটনা। তার দাবি অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো জীবন রক্ষা (ভয়া) না থাকার কারণেই নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে সোমবার বেলা ৩টায় গজারিয়া ট্রলারঘাট এলাকায় সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, চালক মামুন মিয়ার চালিত একটি ইঞ্জিন নৌকার ইঞ্জিন মাঝ নদীতে হঠাৎ বিকল (বন্ধ) হয়ে যায়।